নওগাঁর বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন আগাম সবজি। সরবরাহের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশ চড়া। বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষীরা। তবে দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় অস্বস্থিতে ক্রেতা। সবজির বাজার স্বাভাবিক হতে আরও প্রায় এক মাসের অধিক সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বিভিন্ন জাতের প্রায় ৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০ টন শাকসবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।
ভোরের কুয়াশা শাকসবজির ফুল ও লতায় পড়লেও সকালের সূর্যের আলোয় তা বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রা।
অনাবৃষ্টিতে শাকসবজির আবাদে কৃষকদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আবার সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টিতে শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে শাকসবজির উৎপাদন ব্যহৃত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ কম হওয়ায় বেড়েছে সবজির দামও।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের সোমবাড়ি হাট। সোমবার সাপ্তাহিত হাটবার। এ হাটে ভোর থেকে দিনব্যাপী চাষীরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। করেন পাইকারি বেচাকেনা। হাট ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সিম, ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া বেগুন ও করলা ৯০ টাকা কেজি, মুলা ও বরবটি ৫০ টাকা কেজি, পটল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, পেঁপে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি, ওল ৩৫ থেক ৪০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ টাকা পিস এবং লাউ ২০ থেকে ২৬ টাকা পিস।
ব্যবসায়িরা এ হাট থেকে সবজি কিনে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে থাকেন।
বর্ষাইল গ্রামের সবজি চাষি লতিফুর রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে চার হাজার পিস ফুলকপির চারা লাগিয়েছিলাম। কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে বেশকিছু চারা নষ্ট হয়ে যায়। হাটে ৭০ পিস ফুলিকপি নিয়ে এসেছি। প্রতি পিস ৪০ টাকা হিসেবে বিক্রি করলাম। গত হাটে ১৫ পিস বিক্রি হয়েছে। দিন যত যাবে ফুলকপি তত বড়ো হবে।’
কেশবপুর গ্রামের সিম চাষী সাগর হোসেন বলেন, ‘দুই কাঠা জমিতে সিমের আবাদ করেছি। গাছে ফুল আসলেও ফল আসতে দেরি হয়েছে। দুই বার সাত কেজি সিম বিক্রি করেছি। পাইকারিতে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সিমের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি পেয়ে লাভবান হচ্ছি এখন পর্যন্ত। তবে উৎপাদনের পরিমাণ যখন বেশি হবে তখন দাম কমে আসবে।’
পাইকারি ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, ‘সবজির দাম অতিরিক্ত। কিছুদিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। এতে দামও বেশি। সাপ্তাহিক এক দিনের এ হাটে প্রায় ৫ লাখ টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। আগের বছর এ সময় প্রচুর পরিমাণ সবজি বাজারে উঠতো। তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম।’
জাহিদুল হক নামের আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, ‘কৃষকরা সবজির দাম পাচ্ছেন বেশ ভালো। তবে এবার সবজি কিছুটা কম উঠেছে বাজারে। তবে আশা করছি কয়েকদিন পর আরও বেশি পরিমাণে সবজি উঠতে শুরু করবে বাজারে।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে গাছে সিম আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে দিন ছোট হয়ে আসায় শীত বাড়ছে। এতে করে সিমসহ অন্যান্য আগাম জাতের শাকসবজির আবাদ ভাল হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা ভাল দাম পেয়ে লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’