সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা পরিচালনাকারী এই আইনজীবী সোমবার সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
খুরশীদ আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়া কিংবা হাজী সেলিম দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাই হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী খালেদা জিয়া কিংবা হাজী সেলিমসহ সাজাপ্রাপ্ত কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট গতকালের (রোববার) প্রকাশিত রায়ে বলেছে যে সাজা কখনও স্থগিত হয় না। উপর্যুক্ত আদালতে সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
‘এই রায়ের আলোকে খালেদা জিয়া ও হাজী সেলিমসহ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তাদের সাজা বাতিল হয়নি। যদি হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সংশোধন করে বা বাতিল করে, সেটা ভিন্ন কথা।’
রোববার হাইকোর্ট থেকে প্রকাশিত এক রায়ে বলা হয়, উচ্চ আদালত কর্তৃক সাজা বাতিল না হলে অথবা সাজা ভোগের পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে আপিল বিচারাধীন ও জামিনে থাকা কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
প্রকাশিত রায়ে বলা হয়, এই মামলা থেকে জানা যায় যে আবেদনকারীদের বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তারা দুর্নীতির জন্য দণ্ডিত হয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ একটি গুরুতর অপরাধ। একজন ব্যক্তির সততার মূলে আঘাত করে দুর্নীতি।
একজন সংসদ সদস্য হলেন ক্ষমতা, সম্পত্তি ও জনগণের কল্যাণের ট্রাস্টি। তাদের উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের সততা থাকতে হবে। এর থেকে কোনো বিচ্যুতি হলে তা সততা ও নৈতিক স্খলন হিসাবে বিবেচিত হয়।
আমরা মনে করি, যে অপরাধের জন্য আবেদনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা তাদের নৈতিক স্খলন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, সংবিধান নিজেই একজন সংসদ সদস্যের পদ সৃষ্টি করেছে ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির অযোগ্যতাও নির্ধারণ করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত লোক এমপি হিসেবে নির্বাচিত হলেও তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কারণ সেটা তার কোনো ভয় ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার শপথের বিপক্ষে চলে যায়।
এই মামলায়, সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে বিচারক আবেদনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছেন যা এই আদালতে বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও তাদের অবস্থান হলো তারা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি।
এই আদালত তাদের সাজা স্থগিত করেনি, কিন্তু তারা জামিন পেয়েছেন। জামিন আদেশ দ্বারা, সাজা স্থগিত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়; কিন্তু দোষী সাব্যস্ততা বলবৎ থাকে। আবেদনকারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাজা স্থগিত রেখে সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, একজন ব্যক্তি যিনি বৈধভাবে সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে দোষী সাব্যস্ত এবং দণ্ডিত হলে সংবিধানের ৬৭(১)(ঘ) অনুযায়ী তার আসন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শূন্য হয়ে যাবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে আপিলে বিচারাধীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে রায় দেয় হাইকোর্ট।
দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা স্থগিত চেয়ে আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রোববার ওই পর্যবেক্ষণসহ ৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।