প্রায় সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার রাতে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটির সভাপতি হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব।
তবে শীর্ষ পদের দুজনসহ এ কমিটি মানতে নারাজ রাবি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের একাংশ। তাদের ভাষ্য, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে।
এ নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘোষিত নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।
তিনি আগের কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব আগের কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গালিব ওই বিভাগ থেকে ড্রপ আউট হয়ে হারিয়েছেন ছাত্রত্ব। বর্তমানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন।
মোস্তাফিজুর ও গালিবের বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, কমিটির ২০ জন সহসভাপতির মধ্যে অধিকাংশেরই পড়াশোনা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন। তাকে এই কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে।
তারা আরও জানান, আরেক সহসভাপতি মেসবাহুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবের্ষর ছাত্র ছিলেন। ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান মিশু।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিশুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। তাকেও এই কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে।
আংশিক কমিটিতে আটজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে হলে সিট বাণিজ্য, সিট থেকে আবাসিক ছাত্রকে নামিয়ে দেয়া ও ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।
এদিকে, ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ। পাশাপাশি নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে রোববার দলীয় টেন্টে থেকে তারা এ দাবি জানান ও মোটরসাইকেলে করে পুরো ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন। কয়েকজন নেতা-কর্মী মাদার বখশ হলে ঢুকে কমিটির নতুন সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের ২১৫ নম্বর কক্ষে ও পাশের দুটো কক্ষে ভাঙচুর চালান।
কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার এসব তথ্য জানিয়ে বলেন বলেন, ‘কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচএসসি পাস। তিনি অনার্স করতে পারেননি। ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছে।
‘তার নেতৃত্বে কীভাবে ছাত্রলীগ চলবে? আর সভাপতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ব্যবসা করতেন। ছয় মাসের মধ্যে নেতা হয়ে এসেছেন।’
আমিনুল ইসলাম লিংকন বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলন হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি ৩৪ দিন যাচাই বাছাই করে কী এমন কমিটি দিল! এটা বিতর্কিত কমিটি। এখানে সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। তিনি বিবাহিত, ইন্টার পাশ। ড্রপআউট হয়েছেন।
‘কমিটিতে থাকা প্রায় সবাই বিতর্কিত। ছাত্র নির্যাতন, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি সবই করেছে তারা।’
নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যাচাই-বাছাই করেই কমিটি ঘোষণা করেছেন। আমাদের ছাত্রলীগেরই কতিপয় নেতা নাকি কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে শুনলাম। আসলে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য এমনটা করছে।’