বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যতিক্রমী ‘দেনমোহর’

  • প্রতিনিধি, নাটোর   
  • ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ১৮:০০

কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, ‘বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা চলছে, আমার মনে হয় তা থেকে বেড়িয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য নয় বরং দুজন মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার।’

নগদ অর্থ বা গহনা নয়, সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বিয়ের দেনমোহর হিসেবে পরিবেশের বন্ধু গাছকে বেছে নিয়ে উদাহরণ তৈরি করলেন নাটোরের এক কনে।

নাটোর শহরের দিঘাপতিয়ায় ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের পাশেই শুক্রবার এ ব্যতিক্রমী দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিয়েবাড়ির হৈ-হুল্লোড়ের মাঝেই বর ও কনে মিলে গাছের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যা করছেন। এমন ব্যতিক্রমী ও পরিবেশবান্ধব দেনমোহরের কারণে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

দেনমোহর হিসাবে আপাতত বর কুমিল্লার নাবিন আদনান অংকনের কাছ থেকে ৫টি ফলদ ও বনজ গাছ নিয়েছেন কনে নাটোরের সুকৃতি আদিত্য।

সুকৃতি আদিত্য বলেন, ‘বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য নয়; বরং দুজন মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার।

‘সেখান থেকে আমার মনে হলো যে যদি এমন কিছু করা যায় যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে আবার আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে আমার মনে হয়েছে, গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে; যেটার মাধ্যমে পরিবেশটাও সুস্থ থাকলো, আমরাও খুশি থাকলাম পরিবেশের সুস্থতা দেখে।’

বর নাবিন আদনান বলেন, ‘দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। দেনমোহর হিসেবে গাছের বিষয়টি মূলত প্রতীকী। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। উদাহরণ হিসেবেই আমরা এ বিষয়টি চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।’

কনে সুকৃতির বাবা-মায়ের গাছ এবং পরিবেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নেন গাছ বলে জানান কনের পিতা এম. আসলাম লিটন।

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সিন্ধান্ত নিয়েছিল যে, বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। বাবা হিসাবে আমি তার সিন্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সমাজকে সে একটা বার্তা দিতে চায় যে বিয়েতে মোহরানাটা আসল নয়। আসল হচ্ছে দুটি মানুষের বন্ধন।

‘দুটি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এ বন্ধনটাই আসল। কোন অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবন্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবন্ধ হওয়া বেশি জরুরি। সেই বিষয়টি সুকৃতি অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে আমি গর্বিত।’

এ ঘটনায় বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশি অবাক হয়ে গেলেও সকলেই প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নব-দম্পতিকে। জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে অবাক তারা।

স্থানীয় গুলজান বেগম বলেন, ‘জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখিনি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক।’

সৈয়দ মাসুম রেজা নামে এক সাংস্কৃতিকর্মী বলেন, ‘দেনমোহরে সব সময় কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা চেনতা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।

কনে সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং বর নাবিন আদনান একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন।

বছর ছয়েক আগে তারা পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দুই পারিবারের সম্মতি নিয়েই সুকৃতি-নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

এ বিভাগের আরো খবর