টেকনাফ কক্সবাজারে নগদের এজেন্ট আবদুর রহমান হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলকায় এক বছর আগে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় আদালতে দেয়া অভিযোগ পত্র থেকে বাদ গেছে প্রধান দুই আসামির নাম।
মামলার বাদী আব্দু শুক্কুরের অভিযোগ, তার ভাইয়ের হত্যা মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে কথা না বলেই গোপনে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাহাদাত সিরাজী উদ্দেশ্যমূলক চার্জশিট থেকে আসামিদের বাদ দিয়েছেন। মামলার এজাহারে উল্লিখিত প্রত্যেক আসামি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান মামলার বাদী।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাহাদাত সিরাজীর দাবি, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর রাতে অস্ত্রধারী হাবিব উল্লাহ, বোরহান উদ্দিন জিয়া ও নাছিরের নেতৃত্বে নগদে সুপার ভাইজার আবদুর রহমানকে হত্যা করে সাবরাং নয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরদিন নিহত আবদুর রহমানের ছোট ভাই আব্দু শুক্কুর বাদী হয়ে হাবিব উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তার মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় হাবিব উল্লাহকে। অন্য আসামিরা হলেন আলমগীর ফয়সাল লিটন, বোরহান উদ্দিন জিয়া, ইছহাক, করিম উল্লাহ, নাছির উদ্দিন, সওকত, সালামতু উল্লাহ।
প্রথমে এ মামলার দায়িত্ব পান এসআই একরাম হোসেন। এ তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর দায়িত্ব পান এসআই সাহাদাত সিরাজী। প্রায় এক বছর পর মাত্র ৬ জনকে আসামি করে গত ৬ আগস্ট ২০২৩ আদালতে চার্জশিট জমা দেন তিনি। চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামি হলেন হাবিব উল্লাহ, আলমগীর ফয়সাল লিটন, ইছহাক, করিম উল্লাহ, সওকত, সালামতু উল্লাহ।
এজাহারভুক্ত দুই আসামি বাদ পড়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাহাদাত সিরাজী বলেন, ‘সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আবদুর রহমান হত্যা মামলায় যারা জড়িত তাদেরকে আসামি করে চার্জশিট করা হয়েছে। যাদের সম্পৃক্ততা মেলেনি, তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।’
তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য মানতে নারাজ মামলার বাদী আব্দু শুক্কুরের দাবি, এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে প্রত্যেকে তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত। যে দুইজনকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা আবদুর রহমানকে সরাসরি হত্যা করছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির নাম বাদ দিয়েছেন।
তদন্তের প্রয়োজনে একবারও তার সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেননি বলে জানান বাদী।
তিনি বলেন, ‘আসামিরা জামিনে বেরিয়ে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। একাধিকবার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলাও চালানো হয়েছে।’
এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে আব্দু শুক্কুর জানান, চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি।
টেকনাফে নগদের মাঠকর্মী রাশেদ বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই দুজনের নাম বাদ দিয়েছেন। যদি এরকম হয় মানুষ হত্যা করতে কেউ ভয় করবেন না। শেষ পর্যায়ে যদি টাকার বিনিময়ে আসামিদের বাদ দেয়া যায়, তাইলে মামলা করে লাভটা কী?
‘আসলে যেকোনো ঘটনা ঠান্ডা হয়ে গেলে পুলিশ আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’