ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগ।
শনিবার ঢাকা মহানগরী ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। খবর ডিএমপি নিউজের
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল, মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর, আবু ইউসুফ, দিদার ওরফে দিদার মুন্সী, মোঃ ফেরদৌস ওয়াহীদ, মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু ও মো. দাউদ হোসেন মোল্যা।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন, ডাকাতি করা অর্থে কেনা স্বর্ণালংকার ও নগদ ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১০ অক্টোবর মাদার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকের শাখা থেকে তার কোম্পানির ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেককারে করে বনানী যাচ্ছিলেন। কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাওয়ার সময় খিলক্ষেত থানার প্রাইম ডেন্টাল কলেজ বরাবর ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, ডাকাত চক্রের সদস্যরা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে কোম্পানির গাড়ি থামায়। গাড়িতে অবৈধ টাকা আছে উল্লেখ করে তারা গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে থাকা কোম্পানির কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা, মো. শাহজাহান মিয়া ও ড্রাইভার আবুল বাশারকে হাতকড়া পরায়। এরপর ৪৮ লাখ টাকাসহ ওই গাড়িতে থাকা কোম্পানির তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে তাদের অপহরণ করে পূর্বাচলে ৩০০ ফিট রাস্তায় নিয়ে যায়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাঙ্ক চেক ও ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা। এ ঘটনায় কোম্পানির সিইও সোহেল আহম্মেদ সুলতান খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা করেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত হয় গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া র্যাব পরিচয় দেয়া ডাকাত দলটিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডাকাতির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবুজের নেতৃত্বে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে (একজন আরেকজনকে চেনে না) ডাকাতি করে। অপারেশনের সময় তারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি দল বিভিন্ন ব্যাংকে অবস্থান করে এবং অন্য দলটি রাস্তায় অবস্থান করে। ব্যাংকে অবস্থানকারী ব্যক্তি টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে আর রাস্তায় অবস্থাকারী দলটিকে টাকা উত্তোলনকারীর তথ্য প্রদান করে। তখন রাস্তায় অবস্থানকারী দলটি টাকা উত্তোলকারীর পিছু নেয় এবং পথে ওই ব্যক্তিদের তাদের গাড়িতে উঠিয়ে সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে ফেলে যায়।
তিনি বলেন, এরপর ডাকাতির সময় ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে ফেলে এবং নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। পরে নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিকভাবে ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, স্ত্রীর গহনা কিনেছে কেউ বা জুয়া খেলেছে। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, তাদের নামে ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।