বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির ও দুর্গা মন্দিরের সাবেক পুরোহিত ও সভাপতি শংকর চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কোনো হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি নাই। পরস্পরের আদর্শ ও বিশ্বাসকে সম্মান দিয়ে আমরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছি।’

এক পাশে মন্দিরের ভেতরে ও বাইরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজার্চনা ও উলুধ্বনি শব্দ। আরেক পাশে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা; শোনা যাচ্ছে আজান। এক পাশে ছড়াচ্ছে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ।

এমন দৃশ্য দেখা যাবে লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকায়। ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রায় দুই শ বছরের এক উজ্জ্বল নিদর্শন একই আঙিনায় এই মসজিদ ও মন্দির।

যে যার মতো তাদের ধর্ম পালন করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে।

মহাসপ্তমীতে শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুটি স্থাপনার দেয়াল প্রায় একসঙ্গে লাগোয়া। আসর ও মাগরিবের আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাকঢোলসহ যাবতীয় পূজার্চনার কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন।

নামাজের জামাত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন হতে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ।

স্থানীয়রা জানায়, ১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে পুরান বাজার এলাকাটি অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে বেশি পরিচিত। পরবর্তী সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। পরে নামাজের ঘরটিই ‘পুরান বাজার জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।

এখানে প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যায় স্বাভাবিক নিয়মে চলে দেব-দেবীর পূজার্চনা। প্রতি বছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গা উৎসব।

স্থানীয় উত্তম রায়ের ভাষ্য, কালীবাড়ি মন্দিরটি প্রায় ২০০ বছর পুরোনো। তৎকালীন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজার্চনা করতেন। তারা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও মন্দিরটি থেকে যায় অক্ষত।’

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পাটগ্রাম হতে মসজিদ ও মন্দির দেখতে আসা কলেজছাত্রী আশা রায় বলেন, ‘এখানে কালী মন্দির ও দুর্গা মন্দির এবং একটি মসজিদ আছে। সবাই যে যার মত ধর্ম পালন করছে; কোনো ঝামেলা হয় না।’

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির ও দুর্গা মন্দিরের সাবেক পুরোহিত ও সভাপতি শংকর চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কোনো হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি নাই। পরস্পরের আদর্শ ও বিশ্বাসকে সম্মান দিয়ে আমরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছি।

‘মসজিদে নামাজ হচ্ছে, আমাদের বাদ্যযন্ত্র ঢাকঢোল সব বন্ধ আছে। আবার যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা আবার পূজার্চনা শুরু করব। আগামী যে প্রজন্ম আসবে আশা রাখি তারাও কোনো প্রকার ভেদাভেদ রাখবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট ছিল, আছে আর থাকবে। কোনো দিনই এই সম্প্রীতিতে কোনো দাগ পড়েনি, আর পড়বেও না।’

লালমনিরহাট মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই দেখছি একই সঙ্গে মসজিদ ও মন্দির। এখানে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের নিজ নিজ ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো করে থাকে।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে যার যার ধর্ম তারা পালন করছেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গতকাল মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।

‘জেলায় এবার ৪৭৪টি পূজামণ্ডপে পূজার্চনা চলছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর