ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশু ধ্রুব ও নির্জনের শৈল্পিক ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার ভিন্নরূপ।
সাদা কাগজের ওপর রং-তুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে দুর্গাপ্রতিমা; তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ।
রং-তুলি ও কাগজের তৈরি দুর্গা দেবীর আকৃতি খেলার ছলে বানানো হলেও, এতে বাদ পড়েনি পুলিশি টহল ব্যবস্থা। মণ্ডপের সামনে দেখা যায় ছোট্ট একটি সাউন্ড বক্সও।
চিত্র কার্যটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে ১১ দিন। প্রতিমা পরিপূর্ণতা পেয়েছে ষষ্ঠী পূজার আগেই। শাস্ত্রীয় নিয়মানুসারে ষষ্ঠীতে দিনের বেলায় মায়ের হাতে অসুর বধের অস্ত্র বসানো হয়। সেদিন রাতে মণ্ডপে লাগানো হয় আলোকসজ্জার কাজ। সব কাজ শেষ করে সপ্তমীতে পূজার আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয় এই রং-তুলিতে গড়া দুর্গা দেবীর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার সড়ক বাজারে নিজেদের বাড়িতে ধ্রুব বণিক ও নির্জন বণিকের পূজা মণ্ডপ। কয়েক বছর ধরে কাগজ দিয়ে ছোট করে দুর্গাপ্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি করলেও এবার পরিধি বেড়েছে।
এবার দুর্গার উচ্চতা ছয় ফুটের মতো। বাকিগুলো চার ফুট করে। ককসিট ও কাগজের সমন্বয়ে এসব প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
ধ্রুব বণিক আখাউড়ার বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও নির্জন বণিক একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সম্পর্কে তারা কাকাতো-জ্যাঠাতো ভাই। তাদের জ্যাঠাতো বোন স্কুল শিক্ষক প্রভাতি বণিক তাদের এ কাজে সহায়তা করেছে।
শনিবার দুপুরে কথা হয় ধ্রুব ও নির্জনের সঙ্গে ।
তারা জানায়, কয়েক বছর ধরেই তারা খেলার ছলে দুর্গাপ্রতিমা বানায়। এবার প্রতিমার আকার বেশ বড়। আগে শুধু কাগজে করা হলেও এবার ককসিটও ব্যবহার করা হয়েছে। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে তারা এ কাজ করে।
ধ্রুব ও নির্জন এ কাজে মেধা খাটিয়েছে উল্লেখ করে প্রভাতি বণিক বলেন, ‘দুজন প্রথমে কাগজ কেটে দুর্গা মায়ের মাথা তৈরি করে। মাথার সঙ্গে মিলিয়ে শরীর করতে গিয়ে প্রতিমা বড় হয়ে যায়। যে কারণে তাদেরকে বেশ শ্রম দিতে হয়েছে। তারা বেশ মেধা খাটিয়েছে এ কাজটি করতে।’
নির্জনের মা ফাল্গুনি বণিক বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই তারা কাগজ কেটে দুর্গা মায়ের প্রতিমা বানায়। তবে এবার খুবই ভিন্ন হয়েছে প্রতিমাটি। দেখতে খুবই ভালো লাগছে।’
শিশুদের এ কাজকে উৎসাহ দিতে তিনি সবাইকে প্রতিমা দেখার আমন্ত্রণ জানান।
এ বিষয়ে আখাউড়া পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, ‘শারদ উৎসবে শিশুদের আনন্দটা একটু বেশি। তারা নানাভাবে উদযাপন করে প্রতিটা উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। এ দুজন তাদের মেধা আর পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে যে শৈল্পিক কাজ করেছে সেটা সত্যিই অসাধারণ।’