বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাড়া ফেলেছে সঞ্জুর বাণিজ্যিক ঘোড়া খামার

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধন জটিলতায় ভুগছেন উল্লেখ করে শরীফুল ইসলাম সঞ্জু বলেন, ‘খামারটি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না। নিবন্ধনে ঘোড়ার কথা উল্লেখ নেই। গরু আছে, ছাগল আছে, মুরগি আছে, কিন্তু ঘোড়া নেই।’

শরীফুল ইসলাম সঞ্জু। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি কোকিল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নূরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করা একজন শিক্ষিত যুবক।

ঘোড়া দৌড় বা রেইস খেলা ছোট থেকেই খুব পছন্দ তার। আর এ পছন্দ থেকেই ২০০৭ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে মায়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে একটি ঘোড়া কিনে শুরু করেন রেইস খেলা। দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত রেইস খেলায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন পুরস্কার ও নগদ অর্থ। তবে কিছুদিন পর হঠাৎ তার সেই প্রিয় ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

এতে সঞ্জুর মন খারাপ হলেও হাল ছেড়ে দেননি তিনি। মনে প্রচণ্ড সাহস নিয়ে ঘোড়া দিয়েই সফলতা আসবে এমন আশায় ২০২১ সালে ভারতের রাজস্থান, বিহার ও পাঞ্জাব থেকে আনা কয়েকটি ঘোড়া নিয়ে ‘সঞ্জুস হর্স ফার্ম’ নামে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়া খামারের যাত্রা শুরু করেন তিনি। ঘোড়া বিক্রি করে এখন পর্যন্ত লাভবান সঞ্জু।

দেশে প্রথমবারের মত ময়মনসিংহে বাণিজ্যিকভাবে ঘাড়ার খামার করে সাড়া ফেলেছেন শরীফুল ইসলাম সঞ্জু। কোকিল গ্রামে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মাষ্টারের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত সঞ্জুর খামার। প্রতিদিন এলাকার লোকজনের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন লোকজন আসছেন ঘোড়া দেখতে। এর মধ্যে অনেকেই ঘোড়ার সঙ্গে সেলফি তুলেন আবার অনেকে ভিডিও করে নিয়ে যান। ঘোড়াকে পাশে রাখা সবুজ ঘাস খাইয়েও আনন্দে মাতেন অনেকে।

বর্তমানে খামারে চোখ জুড়ানো সাতটি ঘোড়া রয়েছে। দুইজন শ্রমিক নিয়মিত এই ঘোড়াগুলো পরির্চযা করেন।

স্থানীয়রা জানান, খামারে মারোয়ারি, সিন্ধি, নুকরাসহ বিভিন্ন জাতের ঘোড়া থাকলেও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘোড়া হচ্ছে আরব্য ঐতিহ্যের ‘নুকরা ঘোড়া’। রূপকথার দূরন্ত এই প্রাণীটি এতদিন সিনেমা আর রেসের ময়দানে দেখা গেলেও এখন লালন-পালন করছেন যুবক সঞ্জু। এজন্যও অনেকে আসেন দেখতে, আনন্দময় সময় কাটাতে।

খামারে ঘুরতে এসে সেলফি তুলছেন দর্শনার্থী। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সঞ্জু প্রথমে ঘোড়ার খামার করার সময় অনেকে বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করতো। অনেকে মনে করেছে, খামার করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও। পরে খামারটি ভালোভাবে টিকে যাওয়ায় সবাই বুঝতে পেরেছে ঘোড়া লালন-পালন করেও লাভবান হওয়া যায়। এই খামারে আসা-যাওয়ার সড়কটির দশা বেহাল। সংস্কারের অভাবে এই সড়কটিতে চলাচলে অনেক কষ্ট হয়। ফলে ঘোড়ার খামারাটিকে কেন্দ্র করেই সড়কটির সংস্কার এখন এলাকাবাসীর দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

মুক্তাগাছা থেকে ঘোড়া দেখতে আসা আরাফাত বলেন, ‘নুকরা ঘোড়ার নায়কোচিত স্বভাব আর রূপ-আভিজাত্য দেখতে এসেছি। এ ছাড়াও অন্য ঘোড়াগুলো দেখেও মুগ্ধ হয়েছি।’

খামারের শ্রমিক রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ছোলা-বুট, ধানের কুড়া, খড় ও সবুজ ঘাস ঘোড়ার প্রধান খাবার। সময় মেনে খাবার দিলে ঘোড়া পরিচর্যায় কোনো সমস্যা হয় না। এক্ষেত্রে ঘোড়ার লাথি এবং কামড় থেকে সাবধান থেকেই ওদের যত্ন করতে হয়। তবে আমাদের ঘোড়াগুলো পোষা হওয়ায় কোনো ধরনের সমস্যা হয় না।’

অবশেষে কথা হলো ‘সঞ্জুস হর্স ফার্ম’-এর মালিকের সঙ্গে। সঞ্জু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘোড়া পালনের কারণে প্রথম দিকে এলাকার মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, টিপ্পুনি কাটত। কিন্তু এখন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এই খামার দেখতে। তা দেখে গ্রামের মানুষরা অবাক হয়, মুগ্ধও হয়।’

ঘোড়া প্রভুভক্ত প্রাণী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘোড়াকে আপনি যা শেখাবেন, তাই শিখবে। তাই এই ঘোড়া নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। বাংলাদেশের ঘোড়ার মার্কেটে ব্যাপক সম্ভাবনা। মারওয়ারি ঘোড়াগুলো রানিং করার জন্য সেরা। ইয়াংদের ঘোড়ার রাইডিং করার আগ্রহ প্রচুর। ধনীরা সৌখিনতার বসে বাড়িতে পালন করেন। দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে ঘোড়া আমদানি করতে হয়। প্রতিদিনই এলাকাবাসি ছাড়াও দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লোকজন আসছে এই ঘোড়ার খামার দেখতে এবং ঘোড়া কিনতে।

‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আনসার একাডেমিতে এই খামারের ঘোড়া বিক্রি করেছি। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমি এই খামারেই আরও ঘোড়া উৎপাদন করতে চাই। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগীতা প্রয়োজন।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধন জটিলতায় ভুগছেন উল্লেখ করে এই খামারি আরও বলেন, ‘খামারটি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না। নিবন্ধনে ঘোড়ার কথা উল্লেখ নেই। গরু আছে, ছাগল আছে, মুরগি আছে, কিন্তু ঘোড়া নেই।’

ঘোড়ার খামার করতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাহেলা পারভীন রুমা বলেন, ‘ওই ঘোড়ার খামারের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদের নিবন্ধনে ঘোড়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। তবুও প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সেবা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো উদ্যোক্তা ঘোড়া পালতে চায় এবং সে যদি খামার করতে চায় তাহলে তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে।’

এ বিভাগের আরো খবর