তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর ও কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের কার্যক্রম।
এতে বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। ব্যবসায়ীরাও পুঁজি বিনিয়োগ করে বেকায়দায় পড়েছেন; সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একসময় ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যে কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠতো নাকুগাঁও স্থলবন্দর, এখন আর সেটি চোখে পড়ে না। পাথর ভাঙার ঠুকঠাক ও মেশিনের শব্দ আর কানে বাজে না।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, সম্ভাবনাময় এ বন্দরটিকে ২০১৫ সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ আট বছরে এ বন্দরে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের সুবিধা পাচ্ছেন না এখানকার আমদানিকারকরা। ভারত থেকে ২১টি পণ্য আমদানি করার সুযোগ থাকলেও ভারত ও ভুটান থেকে শুধু পাথর আমদানির মাধ্যমে বন্দরটি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এই বন্দরে বর্তমানে সমিতির অন্তর্ভুক্ত ২৫০ জন আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী রয়েছেন। আর পাথর ভাঙা কাজে তিন থেকে চার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে পাথর আমদানিতেই সচল ছিলো এ বন্দরের কার্যক্রম, কিন্তু হঠাৎ করেই গত ৮ জুলাই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার ডালুর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতি পক্ষ থেকে সেখানে সড়ক সংস্কারের কথা বলে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
একসময় ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠতো নাকুগাঁও স্থলবন্দর। ছবি: নিউজবাংলা
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পাথর আমদানি করতে না পারায় থমকে আছে বন্দর; বন্ধ আছে বন্দরের লোড-আনলোডের কার্যক্রম।
কিন্তু ভুটান থেকে সীমিত আকারে পাথর ভারত হয়েই নাকুগাঁও স্থলবন্দর আসা শুরু করেছে।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বন্দর কর্তৃপক্ষরা জানান, বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। ভারতের পক্ষে কী সমস্যা, তা তারা জানেন না। তবে তারা জানিয়েছে রাস্তার সমস্যা রয়েছে।
বন্দরের শ্রমিক রহমত মিয়া বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। কামকাজ মেলা দিন থাইক্কা বন্ধ তাই সুদের ওপরে টাকা নিয়া চলন লাগতেছে।’
আরেক শ্রমিক আজিজ মিয়া বলেন, ‘বাড়িত খাওন নাই, পোলাপানের পড়াশোনার খরচ চালাবার পাইতেছি না। আমরা শ্রমিক মানুষ। পাথরের কাজ করেই সংসার চালাই। এহন তো অন্য কোনো কামও পাইতেছি না।’
পাথর, কয়লাসহ অনুমোদিত অন্য পণ্যগুলো আমদানির দাবি জানিয়ে নাইম মিয়া বলেন, ‘মেলাদিন থাইক্কা কাম বন্ধ হইয়া আমরা তিন, চার হাজার শ্রমিক বেকার। অনেক কষ্টেই দিন চলতেছে।’
নাকুগাঁও সমিতির আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে পাথর আমদানি তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ভারতের পাথর আমদানি করতে একাধিকবার বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ধরেন সাংমার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলেন।’
নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, ১৮টি অনুমোদিত পণ্য আমদানির কথা থাকলেও শুধু পাথর আমদানি কার্যক্রম চলছে এই বন্দরে। সম্প্রতি নতুন করে মরিচ আমদানির একটি চালান আসার পর ভারত থেকে সব ধরনের পণ্য আসা বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অংশে পণ্য আমদানি করতে কোনো সমস্যা নেই। প্রকৃত পক্ষে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আমাদের প্রত্যাশা আগামী মাসের মধ্যেই ভারত থেকে পাথর আমদানি শুরু হবে।’