মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে পাঁচ শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক কোটি টাকার মালামালসহ একটি ট্রলার ছিনতাই হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলাধীন তেতৈতলা পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জিম্মি পাঁচ শ্রমিকের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ রয়েছেন চারজন। নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন, ৪৫ বছর বয়সী আবদুল মান্নান, ৩৪ বছর বয়সী জাকির হোসেন, ৩১ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম ও ২৪ বছর বয়সী সজীব হোসেন।
এর আগেও গত ১ অক্টোবর তিন শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে করে দেড় কোটি টাকার মালামালাসহ একটি ট্রলার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
বুধবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ট্রলার চালক স্বপন মিয়া বলেন, ‘ট্রলারটিতে থাকা মালগুলো মাদারীপুর জেলার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর। তাদের দায়িত্ব ছিল মেঘনাঘাট এলাকার বিভিন্ন কারখানা থেকে মালামাল সংগ্রহ করে সেগুলো মাদারীপুরে ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেয়া।’
তিনি জানান, সোমবার তারা এখানে এসে মালামাল ট্রলারে লোড করা শুরু করেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত তেল, আটা, ময়দা, চিনি, ভূসি, সুজিসহ প্রায় বিভিন্ন রকমের কোটি টাকার মালামাল ট্রলারটিতে লোড করা হয়।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে ১০ থেকে ১২ সদস্যের সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল চারদিক থেকে তাদের ট্রলারটি ঘিরে ফেলে। এ সময় তিনি সহ ট্রলারের পাঁচ শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারের ভেতরের স্টাফ কেবিনে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।
বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সেখানেই বন্দি অবস্থায় ছিলেন। সন্ধ্যার পরে তাদেরকে বড় রায়পাড়া এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সে বাড়িতে চারজনকে আটক রেখে শুধু ট্রলার চালানোর জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রের মুখে ট্রলার চালাতে বাধ্য হয় তিনি।
এ সময় বড় রায়পাড়া এলাকায় নদীর ধারে কচুরিপানার নিচে সাতটি তেলের ড্রাম নামানোর পর স্থানীয়রা তা দেখে ফেলে। সুবিধা করতে না পেরে বাকি মালামাল সহ ডাকাতদল ট্রলারটি মেঘনা ব্রিজের দিয়ে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে মাঝ রাতে তাকে ট্রলারে ফেলে ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়। যাবার সময় ছোট একটি ট্রলারে করে তারা কিছু মালামাল নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া বলেন, মালামালসহ ট্রলার নিখোঁজের পর তারা ব্যক্তিগতভাবে সেটি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা শুনতে পারেন বড় রায়পাড়া এলাকায় তাদের ট্রলার থেকে চুরি যাওয়া ৭টি তেলের ড্রাম উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মেঘনা সেতুর নিচ থেকে কিছু মালামালসহ ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তেল, চিনিসহ কিছু মালামাল খোয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোলায়মান ঢালী বলেন, ‘বুধবার রাত ১০টার দিকে গজারিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে আমি জানতে পারি মেঘনা নদী সংলগ্ন বড় রায়পাড়া ডকইয়ার্ড এলাকায় কয়েক ড্রাম চোরাই তেল উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে যাওয়ার পরে দেখতে পাই সাতটি তেলের ড্রাম পানিতে কচুরিপানা নিচে লুকানো অবস্থা থেকে উদ্ধার হয়েছে। শুনলাম অস্ত্রের মুখে ট্রলারের পাঁচ শ্রমিককে জিম্মি করে ট্রলারটি ছিনতাই করা হয়েছিল। রাতভর নিখোঁজ শ্রমিক ও মালামাল উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ।’
নারায়ণগঞ্জের বৈদ্যের বাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোসাদ্দেরুল হক বলেন, ‘রাতভর অভিযান চালিয়ে আমরা মালামালসহ ট্রলারটি উদ্ধার করি। নিখোঁজ পাঁচ শ্রমিকের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি চারজনকে উদ্ধারে চেষ্টা আমরা চালাচ্ছি। মালামাল খোয়া গেছে কি না তা এই মুহূর্তে সঠিক বলতে পারছি না। বিস্তারিত পরে জানাব।’
এর আগে ১ অক্টোবর মেঘনা নদীর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশ থেকে ৩ বাল্কহেড শ্রমিকেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দেড় কোটি টাকার মালামালসহ একটি বাল্কহেড নিয়ে পালানোর সময় ছয় ডাকাতকে আটক করে স্থানীয় জেলেরা। এ সময় তিন ডাকাত কৌশলে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনটি রামদা এবং লুট করা নগদ তিন হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।