বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ‘প্রাণহীন’, হতাশ দর্শনার্থী

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৫৫

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ‘এটি কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ছিল। এই উদ্যান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে চিড়িয়াখানা। এখন এটি শুধুই উদ্যান। এটির অনেক কাজ এখনও বাকি। প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে উদ্যানের উন্নয়নকাজ করা হবে। এখন পর্যন্ত ৬ কোটি টাকার মতো কাজ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলে এটির চেহারা বদলে যাবে।’

উন্নয়ন-সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলেছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, কিন্তু এই বিনোদন কেন্দ্রে ঢুকে হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

তারা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও দেখার মতো এখানকার ভালো জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নেই জীবজন্তু, পশুপাখি। এ যেন প্রাণহীন এক উদ্যান।

দর্শনার্থীদের ভাষ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পরিবার নিয়ে দেখার কিছু নেই এখানে। প্রাণী না থাকার কথা স্বীকার করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পার্কের চিড়িয়াখানা অংশটি আর এখানে নেই। এটি এখন শুধুই উদ্যান। আর এটির সংস্কারকাজ এখনও শেষ হয়নি। অনেক উন্নয়ন করা হবে এখানে। কাজ শেষ হলে তখন মানুষের ঘুরতে ভালো লাগবে।

নগরবাসীর বিনোদনের চাহিদা মেটাতে ১৯৭২ সালে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৩৩ একর জমিতে নির্মিত উদ্যানটি ১৯৯৬ সাল থেকে পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এটিই এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র। শুধু রাজশাহীই নয়, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এ উদ্যানে ঘুরতে আসতেন অনেক বছর ধরে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, চিড়িয়াখানায় একসময় বাঘ, সিংহ, উট, ভালুক, গাধা, হায়েনা, অজগর, ময়ূরসহ অনেক পশুপাখি ছিল। অনেক ধরনের পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুখরিত করে রাখত খাঁচা ও আশপাশের এলাকা। অনেক শিশু দর্শনার্থী এখানে এসে এসব জীবজন্তু সম্পর্কে ধারণা পেত। এখানে থাকা অসংখ্য বানর, হনুমানের সঙ্গে দর্শনার্থীদের খেলা করা আর হইচইয়ে সরগরম হয়ে থাকত চিড়িয়াখানা। এখন এখানে নেই কোনো পশুপাখিই। একটি কর্নারে শুধু রয়েছে কিছু হরিণ।

চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নে ভেতরে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে ‘অরণ্য রিসোর্ট’ নির্মাণ করা হয়। এতে সাতটি পরিবার থাকতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হয় পার্কের ভেতরে ফটকের পাশেই।

এদিকে পার্কের ভেতরের সংস্কার ও উন্নয়নকাজের জন্য প্রায় দুই বছর বন্ধের পর গত মাসে জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় বিনোদন কেন্দ্রটি, কিন্তু নতুন করে যেসব দর্শক এখানে ঘুরতে আসছেন তারা হতাশা প্রকাশ করছেন।

পুঠিয়া থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা জামাল আহমেদ জানান, এই পার্কে তিনি আগেও এসেছেন। তখন এখানে এসে যে আনন্দ পেয়েছেন, এখন তা আর কিছুই নেই।

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের পশুপাখি দেখিয়ে আনন্দ দিয়েছিলাম। অনেকদিন বন্ধ ছিল এটি। খুলেছে শুনে আসলাম যে, এখন হয়তো আরও অনেক কিছু দেখতে পাব, কিন্তু কিছুই তো নেই। রাস্তাগুলো সুন্দর হয়েছে। পার্কের ভেতরে সুন্দর সুন্দর রাস্তা হয়েছে।

‘গেটগুলো সুন্দর করা হয়েছে, কিন্তু বাচ্চারা কী দেখবে এখানে? তাদের দেখার মতো তো কিছুই দেখি না। কিছু খেলনা দেখছি, কিন্তু সেগুলো এখনও চালু হয়নি।’

কাটাখালী থেকে এসেছিলেন আবদুর রহিম। সঙ্গে তার স্ত্রী ও এক বাচ্চা। তিনিও জানালেন হতাশার কথা।

তিনি বলেন, ‘একসময় এখানে ঘুরতে এসে বাঘ, সিংঘসহ অসংখ্য প্রাণীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন এসবের কিছুই নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের ঘোরাঘুরির মতো পরিবেশ হয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘোরার মত কিছু দেখি না।’

রাজশাহীর বৃহৎ এ বিনোদন কেন্দ্র থেকে পশুপাখি সরিয়ে নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এখানকার সুশীল সমাজের অনেকেই।

গত মাসে যখন এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ওই সময় হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন। চিড়িয়াখানায় শেষ পেরেক ঠোকা হলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ‘এটি কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ছিল। এই উদ্যান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে চিড়িয়াখানা। এখন এটি শুধুই উদ্যান। এটির অনেক কাজ এখনও বাকি। প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে উদ্যানের উন্নয়নকাজ করা হবে।

‘এখন পর্যন্ত ছয় কোটি টাকার মতো কাজ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলে এটির চেহারা বদলে যাবে। বাচ্চাদের জন্য আলাদা কর্নার করা হবে এখানে। সেখানে তাদের জন্য অনেক খেলার আইটেম থাকবে। এ ছাড়া অনেক কিছুই করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বদলে যাবে উদ্যানের চেহারা। আর মানুষের চিড়িয়াখানার যে চাহিদা, সেই চাহিদা মেটানোর জন্য আলাদা উদ্যোগ নেয়া হবে। রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকায় একটি সাফারি পার্ক করার পরিকল্পনা আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু থাকবে।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই পার্কের কাজ শেষ না হলেও খুলে দেয়ার কারণ হলো সাধারণ মানুষের হাঁটাহাঁটির ব্যবস্থা করা। অনেক মানুষই বিকেলে হাঁটবার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ চান।

‘তাদের চাহিদার দিকটার গুরুত্ব দিয়ে এটি আগেই খুলে দেয়া হলো। নির্ধারিত ফি দিয়ে ভেতরে অনেকেই এখন হাঁটাহাঁটি করেন।’

এ বিভাগের আরো খবর