রাজধানী ঢাকায় ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশ থেকে মহাযাত্রা শুরু হবে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী শনিবার মহাসমাবেশ হবে। এই মহাসমাবেশ থেকে মহাযাত্রা হবে। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে অশান্তি সৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগের পতন ঘটাব। যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় এই কর্মসূচি সেদিন সব রাজনৈতিক দল পালন করবে।’
বুধবার নয়াপল্টনের জনসমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মী-সমর্থকদের একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
বুধবার দুপুর ২টার দিকে নয়াপল্টনে সামনের সড়কের অস্থায়ী মঞ্চে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। তবে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশে অংশ নেন তারা। অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও বিএনপির দলীয় পতাকা। সমাবেশ শুরুর আগে থেকেই নয়াপল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল ও বিজয়নগর এলাকা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপির সমাবেশ স্থলসহ কাকরাইল, বিজয়নগর ও ফকিরাপুল এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিলএন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, সমাবেশে আসার পথে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। বুধবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ কোনোদিনই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘জনতার ঢল নেমেছে। দেশের মানুষে আজ জেগেছে, দেশ থেকে একদলীয় সরকার দূর করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। যে গণতন্ত্র এর আগেও আওয়ামী লীগ বাকশাল করে কায়েম করেছিল। বাংলাদেশকে তারা নিজেদের জমিদারিতে পরিণত করতে চায়।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গতকালও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বহু সভা করলাম আমরা। প্রত্যেকটির আগে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের কারাগার ভর্তি হয়ে গেছে আমাদের নেতাকর্মী দিয়ে। তবে গ্রেপ্তারের ভয় এখন আর কেউ পায় না। কারণ নেতাকর্মীরা বুঝে গেছে, এই সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। একটা ভঙ্গুর অবস্থায় এই সরকার অবস্থান করছে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকালে। এই দেশের মানুষ এই স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, অবৈধ ও দখলাদার সরকারকে আর একদিনও দেখতে চায় না। মানুষ আর অপেক্ষা করতে চায় না। অর্থনৈতিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সব অধিকার হারিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছে।’
সমাবেশে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিএনপি বিষয়ক মন্ত্রী। আমি তার সমালোচনাও করি, আবার ধন্যবাদও দিতে চাই। গতকাল তিনি প্রচার করেছেন, সারাদেশ থেকে নাকি লোকজন চলে এসেছে, হোটলে বুক হয়েছে। এটা দেখে আরও মানুষ এসেছে। ওবায়দুল কাদের এই কাজটা অন্তত ভালো করেছেন।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।