সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়।
এই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণা করা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক তার জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে তাকে জেরা করছেন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী। পরে জেরা অসমাপ্ত রেখে মামলাটি ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী রমজান আলী শিকদার। আর চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহন বাস মালিকের পক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবহান তরফদার।
পরে আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা এ মামলায় বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর তারা (বাদীপক্ষ) তাকে জেরা করছেন।
‘ওনাকে (ড. শামসুল হক) আমরা সাক্ষী করে জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন গ্রহণ করে আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। গত কয়েকদিন হলো মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। পরে জেরা অসমাপ্ত রেখে মামলাটি ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।’
একই ঘটনায় চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাটি আপিল বিভাগে রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীর। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
এরপর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন।
পরবর্তীতে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ এবং মিশুক মনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাদের ছেলে আবেদন করেন।
ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর মামলাটি হাইকোর্টে চলে আসে। এর মধ্যে তারেক মাসুদের পক্ষে ক্ষতিপূরণের মামলাটি হাইকোর্ট পেরিয়ে আপিলে বিচারের অপেক্ষায়। আর মিশুক মুনিরের মামলাটি হাইকোর্টে।
এছাড়া বাস চালককে আসামি করে করা মামলাটির দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক রায়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা দেয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। তবে আপিল শুনানির আগেই ২০২০ সালের ১ আগস্ট তিনি মারা যান।
এদিকে ওই দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বাসচালক নির্দোষ ছিলেন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিতে রাজি হন অধ্যাপক ড. সামছুল হক।
নিজের গবেষণা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় সাক্ষী থাকে না। তার কারণ চলন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা যে যেখানের সেখানে চলে যায়। যার ফলে এসব মামলায় সাক্ষী পাওয়া দুরূহ হয়। এমনকি মামলা বিচারেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। এ কারণে ঘটনায় দোষ কার সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পারলে দোষী শনাক্ত সহজ হয়।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি দেশেই এ বিষয়ে বিশেষ আইন আছে। সড়ক দুর্ঘটনা যেহেতু একটা বিশেষ ঘটনা, এটা শনাক্ত বিশেষ আইনেই হওয়া উচিত।
‘কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো, চালক ব্রেক কষেছিল কি না, কতদূর থেকে কষেছিল, কে রং সাইডে ছিল, গাড়িটির শেষ অবস্থান কী- ইত্যাদি বিষয় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে হয়। এটা তদন্ত কর্মকর্তা বা বাইরে থেকে কাউকে সাক্ষী বানিয়ে প্রমাণ করা যায় না। সবকিছু মিলিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের জন্য একটা বিশেষ আইনের মাধ্যমে এটা চালু করা হলে হয়তো সঠিকভাবে নিরূপণ করা সহজ হবে।’