সরকার পতনের চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ঘোষিত জনসমাবেশ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে কোনো কাজ হবে না। জনগণ গভীর নিদ্রায় নেই। চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে এগুচ্ছে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলেনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বুধবারের সমাবেশে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনের গতি প্রকৃতির পরিবর্তন হবে না। তা আরও তীব্রতর হবে। মাত্রাছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাস ও পুলিশি আক্রমণের মুখেও গণতন্ত্রকামী মানুষ গণতন্ত্র ফেরানোর প্রচেষ্টায় অক্লান্ত, সংকল্পবদ্ধ ও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। সরকার বিএনপির সমাবেশ নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মিথ্যার আঁতুড় ঘরে জন্ম আওয়ামী লীগ নেতাদের। অসত্য, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার ছড়ানোই যেন আওয়ামী নেতাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এরা ডাকাতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। ব্যাংক ডাকাতি, অন্যের জমি ডাকাতি, নাগরিক অধিকার, ব্যালট বাক্স ডাকাতিসহ সমগ্র নির্বাচন পদ্ধতিকে ডাকাতি করা ছাড়া তাদের রাজনীতিতে কোনো নীতি বা আদর্শ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা ও আক্রোশবশত তৈরি করেছেন নিষ্ঠুর ধ্বংসের পথ। এক ভয়ানক অনাচার ও অবিচারের রাজত্ব কায়েম করে অপপ্রচারের উপরেই টিকে থাকতে হয় অবৈধ ক্ষমতাসীনদের।
‘দেশে দেশে যুগে যুগে আমরা সেই দৃষ্টান্তই সবসময় দেখেছি। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুসিত করে জবাবদিহিহীন ও অসীম ক্ষমতাশালী সরকার কায়েম হয়েছে জনগণের ক্ষমতা ক্ষরণ করে। আর এ কারণেই দেশের সম্পদ লুন্ঠন ও অর্থ পাচারে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠদত্বের শিরোপা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, বুধবার বেলা দুইটায় রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসমাবেশ করবে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ।
তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে সরকারি ব্যর্থতায় খাদ্যপণ্যের চরমমূল্যস্ফীতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। রোগে-শোকে কাহিল সাধারণ মানুষ। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পিরামিড জমেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার ভ্রুক্ষেপহীন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর এক দফা দাবিতে সারা দেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেগে উঠেছে মানুষ। হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণের সম্মিলিত মিছিল রাজপথকে প্রকম্পিত করছে।
বিএনপির সভা, সমাবেশ, মিটিং, মিছিল, স্লোগানে চারদিক থেকে জনগণের স্রোত দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ সরকার। বাক স্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য অনেক মানুষ মামলা-হামলার শিকার হয়ে রাজপথে তাদের সরব উপস্থিতির কোনো কমতি হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মোট আহত ১ হাজার ৯৫০ জন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৪৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২ হাজার ৩৫৫ জন। এসব মামলায় আসামি ১৩ হাজার ১৯০ জন বিএনপি নেতা-কর্মী।