বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাতৃভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তার (তারেক জিয়া) মা এতো অসুস্থ, তিনি নাকি যখন তখন মরে যাবেন! তারপরও ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না? এটা কেমন ছেলে? মা এখন ঘরে পড়ে মরে, বয়স হয়েছে, আবার অসুস্থ।’
শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাওলায় শনিবার এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন দেখছি, বিএনপি নেতারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চান। নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না, সে নেবে? এমন আশা করাও দুরাশা।
‘আমি তো বলব, তারেক মাকে দেখতে আসুক। খালেদা জিয়ার আরেক ছেলে কোকো মারা গেল। তার বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিং দুর্নীতির মামলা ছিল। কিন্তু সে মালয়েশিয়াতে মারা যায়। তার লাশ আসে। আমি একজন মা। আমারও সন্তান আছে। আমি খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাতে গিয়েছিলাম। আমার তরফ থেকে আমার মিলিটারি সেক্রোটারি তাদের বাসায় যোগাযোগ করে সময় ঠিক করে। কিন্তু আমি যখন সেই বাসার সামনে যাই, বাসার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এখন দেখি বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। আমি জিজ্ঞাসা করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে, আর বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়ি গিয়ে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। এই নাটকই করে যাচ্ছে তারা।’
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বাসায় ঢুকতে না পারার বিষয়ে আক্ষেপ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি যখন সেই বাসার সামনে যাই, বাসার গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। ভেতরে বিএনপি নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গেটে তালা দিয়ে আমাকে ঢুকতে দেবে না।
‘কত বড় অপমান! আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। আমি গেছি সহানুভূতি দেখাতে, আমাকে ঢুকতে দেয় না। খালেদা জিয়া ভুলে গেছেন, সেই একাত্তরের পর কতবার তিনি ৩২ নম্বরে গেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব না থাকলে, আমার মা সহযোগিতা না করলে বেগম জিয়া হিসেবে নিজের নাম-পরিচয় দিতে পারতেন না তিনি।’
খালেদা জিয়ার ভাই-বোনের অনুরোধে তার সাজা স্থগিত রেখে বাড়িতে রাখার সুযোগ করে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তার বড় বোন ও ভাই, বোনের জামাই আমার সাথে এবং রেহানার সাথে দেখা করে। গণভবনে এসে কান্নাকাটি করে।
‘সরকারপ্রধান হিসেবে আমার যেটুকু ক্ষমতা তার সবটুকু করেছি। যদিও তিনি আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা ও বার বার হামলা করেছেন। তিনি এক একটা বক্তৃতা দিয়েছেন, তারপর আমার ওপর হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। আমার নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছেন।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, লুটপাট, মানি লন্ডারিং ও হত্যার কারণে ২০০৭ সালে এদেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সেই জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়ার ছেলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জীবনে আর নাকি রাজনীতি করবে না।
‘যে টাকা সে মানি লন্ডারিং করেছিল, সেটা ধরা পড়ে। তার দুর্নীতির সাক্ষ্য কিন্তু এফবিআই বাংলাদেশে এসেই দিয়ে যায়। সেই মামলায় তারেক সাজাপ্রাপ্ত। এফবিআই’র সাক্ষ্যেই সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরাকারবার ও মানি লন্ডারিং। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যা মামলারও আসামি সে।’