বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদা জিয়ার কোনো অবদান নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। আর স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছে, মন্ত্রী বানিয়েছে, ক্ষমতায়িত করেছে। আসলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন না।’
শনিবার রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার কাওলা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। তারা দেশের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদা জিয়ার কোনো অবদান নেই।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। তিনি পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন। ভোট চুরি করে জাতির পিতার হত্যাকারীকে পার্লামেন্টে বসিয়েছিলেন।
‘আল বদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী- যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। জিয়াও বসিয়ে ছিলেন, এরশাদও।
‘দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এদের কোনো অবদান নেই। তারা সেটা করতেও চায় না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, এটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি। গত ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কিছুই করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগই করেছে।’
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর কাজ করেছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের জন্ম হয়েছে হত্যার মধ্য দিয়ে।
‘জিয়া ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। ওই অবৈধ দখলদারদের দোসর বিএনপি-জামায়াত আজ বাংলোদেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করেছি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছে।’
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, বিদ্যুৎ ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য কানসাটে আন্দোলন করায় মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছে।
‘ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের অভাব ছিল। মানুষ বিদ্যুৎ ও পানির জন্য আন্দোলন করেছিল। বিএনপির এক নেতাকে পাবলিক ধাওয়া দিয়েছিল। এক পর্যায়ে তার নামই হয়ে গিয়েছিল দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে তিনি পালিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তার (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে অনশন করে। তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছে? বাসা থেকে কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে, গিয়ে কী খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন?
‘নাটক করার তো একটা সীমা থাকে। তারা অনশন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে চায়, নেবেটা কে? যে ছেলে মাকে দেখতে আসে না। এমন আশা করাও দুরাশা।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতোই অসুস্থ, তিনি নাকি মারা যাবেন! হ্যাঁ বয়স হয়েছে, আবার অসুস্থ। কিন্তু এত অসুস্থ হলে তার ছেলে তাকে দেখতে আসে না কেন? এটা কেমন ছেলে?’
রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনেছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি। এখনও কিনছি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা অংশ নেন।
এর আগে বেলা সোয়া ৩টার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের জনসমাবেশে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।