পরিস্থিতি সামাল দিতে আওয়ামী লীগের চতুর্দিকে দোড়াদোড়ি শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চতুর্দিকে দোড়াদোড়ি শুরু হয়েছে। বিদেশে ঘুরে ঘুরে যদি কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। আর ঘোরাঘুরি করে লাভ নেই। এই দেশের সব মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
‘মানুষ বাঁচতে চায় আপনাদের (আওয়ামী লীগ) হাত থেকে। আপনাদের চুরি, দুর্নীতি, নির্যাতন, যন্ত্রণা, রাষ্ট্রকে সব কিছু থেকে ধ্বংস করে দেয়া- এসব থেকে মানুষ বাচতে চায়।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সব কিছু দখল করে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেশে এখন দুই শ্রেণি। এক শ্রেণি পাহাড় বানিয়েছে বিত্তের, টাকা-পয়সা সম্পদের। তাদের ছেলেমেয়েরা কেউ এই দেশে পড়ে না, তারা টাকা সব বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আর আমাদের ছেলেমেয়েরা এই দেশে পড়াশোনা করে চাকরি পায় না। অথচ এই সরকার কথা দিয়েছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে।’
‘আ লীগ সবসময় একটা প্রতারক দল’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মান্না সাহেব আগে বলতেন, ফোর টোয়েন্টি দল। অর্থ্যাৎ তারা মুখে বলবে একটা, কাজ করবে আরেকটা। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ বলেছে, এখানে নাকি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তারাই এনেছে। গত দুই নির্বাচন তারা নাকি সুষ্ঠুভাবেই করেছে। অথচ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ নির্বাচিত হয়েছিল, ২০১৮তে আগের রাতে ভোট করেছে। এখন তারা বলছে আমরা ওপর আস্থা রাখেন। আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এটা হচ্ছে শেয়ালের কাছে মুরগি দেয়া।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রিজার্ভ নেমে যাচ্ছে, কয়েকদিন পর আমদানির টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, ৪২ ভাগ অর্ডার কমে গেছে, কাজ করতে পারছে না। বেতন পাচ্ছে না। বাজারে গেলে তারা চাল-ডাল নিত্যপণ্য কিনতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম কিনে দিতে পারছে না। আর তারা অনেক আনন্দে আছেন।’
নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দ্রুত একটা নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেন। নির্বাচন দিলে ল্যাঠা চুকে যাবে। এতই যদি জনপ্রিয় হন, ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়। এতকিছু বানিয়েছেন, পদ্মাসেতু, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, উড়ালসড়ক বানিয়েছেন, জনগণ তো আপনাকে ভোট দেবে। এইজন্য আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না। আমাদের পবিত্র দায়িত্ব, মানুষকে এই ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিঃসন্দেহে এই দানবের, ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে।’
ছাত্র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহসচিব বলেন, ‘আমি অনেক আশাবাদী। এই দেশে যা কিছু কল্যাণকর ঘটেছে, যা কিছু মহৎ ঘটেছে, যা কিছু বদলে দিয়েছে তার সবটাই ছা্ত্র ও যুবকদের দ্বারা। আর সেজন্যই আমার অত্যন্ত আশার দিন। আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে একটা ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে, স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে খানখান করে, আপনজনদের দূরে সরে নিয়ে, আজকে বাংলাদেশকে একটা তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে, তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, মুখে কুলুপ এটে বসে থাকবেন না, জেগে উঠতে হবে। হাত হুটিয়ে বসে থাকবেন না। নিজে বাচতে দেশ বাচাতে বাবা মা বন্ধুদের বাচাতে জেগে উঠতে হবে। অনথায় তারা মাথায় উঠে বসেছে। আজকে এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে আগামীকাল আপনাদের সঙ্গেও এসব হতে হবে। তরুণদের ক্ষোভটা মোবাইল সেটে। একটা স্ট্যাটাস দিলেই শেষ। ক্ষোভটা মোবাইলসেটে দিলে হবে না, রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাকে যেভাবে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়েছে তার নিন্দা ও ক্ষোভ জানানোর ভাষা নেই। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার।’সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।