ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ যাচাই-বাছাই হয়। এ সময় মনোনয়নপত্র দাখিল করা ছয় প্রার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে বৈধ ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম।
বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দলীয় ও স্বতন্ত্রভাবে ছয়জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলকৃতরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু, জাতীয় পার্টির মনোননীত প্রার্থী আবদুল হমিদ ভাসানী, জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) মনোনীত রাজ্জাক হোসেন। তাছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা ও ইব্রাহিম এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।
এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইব্রাহিমের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহগীর আলম জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিলের সময় মোট ভোটারের এক শতাংশের স্বাক্ষর নিয়ে তা জমা দিতে হয়। এর মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন দৈবচয়নের মাধ্যমে ১০ জনের স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই করে। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইব্রাহিমের মনোনয়নে ১০ জনের স্বাক্ষরের মধ্যে চারজন কোনো স্বাক্ষর করেননি। তাছাড়া স্বাক্ষরের তালিকায় একজন মৃত ব্যক্তি রয়েছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করেই তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে কোনো অভিযোগ থাকলে প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন। আপিলের ভিত্তিতে ১৮ অক্টোবর তা নিষ্পত্তি করা হবে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে এবারও দলীয় মনোনয়ন পাননি জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জিয়াউল লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন করেন। সেবার তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে (ধানের শীষ) প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। তবে ওই নির্বাচনে জিয়াউল হককে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তখন তার জামাতা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দেয়া হয় লাঙ্গল প্রতীক। সে সময় নির্বাচনের দুদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রেজাউল।
নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হন লাঙ্গলের রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। অবশ্য সেবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি। ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন। তিনি পান ৭৫ হাজার ৪১৯টি ভোট। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে সিংহ প্রতীকে ৩৯ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আমার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া আমি রওশন এরশাদের হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এখন লাঙ্গল দেয়ার মালিক জি এম কাদের। এছাড়া সব দলের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক আছে। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
উল্লেখ্য, ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই সময়ে আসনটিতে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।