পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের চার কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ওই চারজনের বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন শেখ সুমন, তানজিদ হোসেন বাবু, রাতুল হোসেন ও তামিম মোল্লা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ সুমন (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা), তানজিদ হোসেন বাবু (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা), রাতুল হোসেন (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা) ও তামিম মোল্লাকে (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাময়িক বহিষ্কার হওয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব উল্লেখিত ব্যক্তিদের আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর দুপুরে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। ঢাকা ওয়েভের প্রতিবেদক ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক শীতাংশু ভৌমিক অংকুর ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার ফোন কেড়ে নেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তাকে মারধর শুরু করেন। ওই সময় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য পার্থ সাহা এগিয়ে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর কলেজ মসজিদের সামনে শীতাংশুকে দ্বিতীয় দফায় আবার মারধর করেন ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ কর্মী।
সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে কবি নজরুল কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক হাসান শুভ বলেন, ‘সাংবাদিক মারধরের মতো এমন একটি অমানবিক ও ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে সাময়িক বহিষ্কার একেবারেই লঘু শাস্তি। এদের সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা উচিত ছিল। তা ছাড়া অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বজনপ্রীতি করে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।’
মারধরের ঘটনায় অন্যতম দুই অভিযুক্ত কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মেহেদী হাসান পলাশ ও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম তাজের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মারধরের শিকার শীতাংশু ভৌমিক অংকুর বলেন, ‘প্রথমত বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ। দেরিতে হলেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো যাদের নেতৃত্বে আমাকে মারধর করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। অথচ কলেজ প্রশাসন মারধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি যে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে ছিলাম, কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।
‘আমার পক্ষ থেকে সাংবাদিক সমিতির বড় ভাইয়েরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আরও এক সপ্তাহ আগে। ঘটনার এতদিন পার হওয়ার পরও অধ্যক্ষ বা কলেজ প্রশাসনের কেউ আমার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।’