বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চাউল ডাইল চাই না, ভারতীয় গো ঠ্যাকান’

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০৬

চলতি বছরে সাগরে মাছ শিকারে ২৩ জুলাই থেকে ছিল ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বুধবার মধ্যরাতে ফের শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় জেলেরা। তবে তাদের হতাশার বড় কারণ, নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে। ফলে মাছের প্রজনন বৃদ্ধির যে উদ্দেশ্যে এই নিষেধাজ্ঞা, তার সুফল মিলছে না।

‘এমনেই এ বচ্ছর মাছ পোনা কোম। মোগো অবস্থা খুব খারাপ। গুরাগারা লইয়া দুগ্গা ডাইল-ভাত খামু হেইয়ার কোনো উপায় নাই। ২২ দিনের অবরোধে (নিষেধাজ্ঞা) ভারতের বড় বড় ট্রলি সাগরে মাছ ধইর‌্যা লইয়া যায়। মোগো যত কষ্ট অউক (হোক) সামলামু, তোমো (তবুও) ভারতীয়ারা যাতে অবরোধের সময় সাগরে মাছ না ধরে হেইয়া ঠ্যাহান।’

নিরাপদ প্রজননের জন্য ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময়ের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে বুধবার মধ্যরাতে।

এই নিষেধাজ্ঞাকে সামনে রেখে এদিন কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের জেলে আলমাস সিকদার।

ইলিশ মৌসুমটা এবার তেমন ভালো কাটেনি জেলেদের। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ বিক্রয় কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮১৩ দশমিক ৩৬ টন ইলিশ অবতরণ হয়েছে। এর সঙ্গে অন্যান্য প্রজাতির মাছ অবতরণ হয়েছে ৪৩৩ দশমিক ১৭ টন।

অথচ গত বছর ঠিক এই ভরা মৌসুমে এই কেন্দ্রে ইলিশ অবতরণ হয়েছিল ১ হাজার ৬০ দশমিক ৫৬ টন। অন্যান্য মাছ মিলেছিল ৩৬০ দশমিক ০৩ টন। তা থেকে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছিল এক কোটি চার লাখ টাকা। আর এবার রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

পরিসংখ্যান বলছে, এবার ইলিশসহ অন্য সব মাছের অবতরণ কমেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, তাদের শতকরা ১০ থেকে ১৫ জনের কপালে মিলেছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। বেশিরভাগ জেলেই হতাশা নিয়ে ফিরেছেন তীরে।

চলতি বছরে সাগরে মাছ শিকারে ২৩ জুলাই থেকে ছিল ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। আবারও ইলিশ মৌসুম শেষ। মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা ভর করেছে জেলেদের ওপর। তবে জেলেদের হতাশার বড় কারণ, নিষেধাজ্ঞার সময়টাকে ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার। এতে করে মাছের প্রজনন বৃদ্ধির সরকারি পদক্ষেপেরও সুফল সেভাবে মিলছে না।

জেলেদের এমন অভিযোগের সত্যতা মেলে বিগত বছরগুলোতে বঙ্গোপসাগরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের দায়ে আটক হওয়া ভারতীয় জেলেদের পরিসংখ্যানে।

সবশেষ অবৈধভাবে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় বিপুল পরিমাণ ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছসহ ১৩ ভারতীয় জেলেকে আটক করে কোস্টগার্ড। একই অপরাধে এর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট ১৩ জন, ২৯ জানুয়ারি ২৮ জন, ২ ডিসেম্বর ১৭ জন ও ২৩ ডিসেম্বর ১৬ জন ভারতীয় জেলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়।

এছাড়াও ২০২২ সালের ৭ জুলাই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বঙ্গোপসাগরের মোহনা রামনাবাদ চ্যানেল থেকে ৩২টি ভারতীয় ট্রলারসহ পাঁচ শতাধিক জেলেকে আটক করেন উপকূলীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা। প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে।

তালতলীর নিদ্রারচর এলাকার জেলে আবদুল হক মিয়া বলেন, ‘সরকার মোগো ২২ দিন নিষুদ (নিষেধাজ্ঞা) দিছে মাছ না ধরার। মোরা আত-পাও গুছাইয়া (হাত-পা গুটিয়ে) বইস্যা থাকমু আর হ্যারা (ভারতীয়রা) মাছ ধইর‌্যা লইয়া যাইবে। না খাইয়া থাহার চাইতেও এইডা মোগো জইন্নে বেশি কষ্টের।’

বরগুনা জেলে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল মাঝি বলেন, ‘বাংলাদেশের জলসীমা শেষে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকা কাছে। সেখানকার শত শত জেলে এ দেশের জলসীমায় মাছ ধরতে আসে। মাছ ধরার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম থাকায় তারা অনেক বেশি মাছ আহরণ করতে পারে।’

সাগরে অধিকাংশ সময়ই ভারতীয় জেলেদের উৎপাত বেশি থাকে উল্লেখ করে জেলে খালেক হাওলাদার বলেন, ‘ভারতীয় জেলেরা কারেন্ট জালসহ পাঁচ ধরনের অত্যাধুনিক জাল ব্যবহার করে। তাদের কাছে রয়েছে জিপিএস (বিশেষ সঙ্কেত) নামক বিশেষ ধরনের যন্ত্র। এ যন্ত্রের মাধ্যমে তারা যে পথ দিয়ে আসে, আবার সে পথ দিয়েই ফিরে যায়।

‘বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি- বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা চলার সময়টাতে ভারতীয় জেলেরা আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এমনকি তাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো নির্বিচারে প্রজননস্থলে মাছ শিকার করে বেড়ায়। এমনটা চলতে থাকলে আমাদের ভাগ্যে আর ইলিশ জুটবে না।’

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরি বলেন, ‘পেটে পাথর বেঁধে আমরা মাছ ধরায় বিরত থাকি। আর পাশের দেশের জেলেরা আমাদের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে না হয় জেলেদের লাভ, না বাড়ে মাছের উৎপাদন।

‘আমরা কষ্ট করতে প্রস্তুত আছি, যদি তাতে দেশের ভালো হয়। কিন্তু ভারতীয়রা মাছ শিকার করলে এতে তো ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হচ্ছে না।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার দেব বলেন, এ বছর জেলায় মোট ৩৬ হাজার জেলেকে নিষেধাজ্ঞাকালীন খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এজন্য ৯’শ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

যে ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর