কক্সবাজার সদরের রামু লম্বরী পাড়ার মোহাম্মদ ওসমান স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে এসেছিলেন কক্সবাজারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে।
ওসমান বলেন, ‘আমার শ্বশুর বাড়ির শত বছরের বসতবাড়ি। সেখানে ২০টি পরিবারের বসবাস। সবাই হতদরিদ্র। ওই জমি রেললাইনের জন্য অধিগ্রহণ হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ। ওই টাকা আত্মসাতের জন্য গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
‘তৎকালীন রাজস্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিসি আশরাফুল আফসারের নেতৃত্বে এলও হাসনাত, সার্ভেয়ার মাসুদ ও দালাল শাহজাহান মিলে ওই জমির ভুয়া খতিয়ান বানিয়ে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেন।’
তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আদালতে চারটি মামলাও চলমান ছিল। কাউকে টাকা না দেয়ার জন্য আদালত নোটিশও পাঠায়। কিন্তু আদালতের অগোচরে ওই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় হতদরিদ্র ২০টি পরিবারের সবকিছু।’
বুধবার কক্সবাজারে পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে গণশুনানি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। ছবি: নিউজবাংলা
বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা শহরে পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে টানা ৬ ঘণ্টা গণশুনানি চলে।
শুনানিতে ওসমানের মতো অনেক ভুক্তভোগী তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। মোট ৭৯টি আবেদনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ ওঠে।
জেলা জুড়ে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ার পর সেই টাকা আদায় করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এখানে কার জমির টাকা কে তুলে নিয়ে গেল তারও সঠিক ব্যাখ্যা নেই, যা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়।
গণশুনানিতে শুধু ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নয়; কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সদর হাসপাতাল, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, পুলিশ, সমবায় অফিস, সমাজ সেবা অফিস, জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, বন বিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ একাধিক সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠে আসে। ভুক্তভোগীরা একেকজন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে দুদক (তদন্ত) কমিশনার মো. জহুরুল হক সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। নয়তো পরবর্তীতে দুদক তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশটা খুব বেশি উদ্ভট। এখানে অশিক্ষিত মানুষগুলো বিদেশে গিয়ে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ে। আর শিক্ষিত মানুষ দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেন। যে টাকা জমা হয় সুইস ব্যাংকে। এসব শিক্ষিত দুর্নীতিবাজকে প্রকাশ্যে ঘৃণা করতে হবে।’
জহুরুল হক আরও বলেন, ‘সব দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করে না। দুদক যেসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করে তার বেশিরভাগই সরকারি প্রতিষ্ঠান ঘিরে। এর বাইরে মানি লন্ডারিং বিষয়ে কাজ করে। অপরাপর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা কাজ করে।
‘দুদক আমলে নেয়া মামলায় এ পর্যন্ত দুর্নীতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ও মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে শত ভগ সফলতা এসেছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আকতার হোসেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বকুল বক্তব্য দেন।
এ সময় সব সরকারি দপ্তর প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।