টাঙ্গাইল জেলায় একদিনের ভারি বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৯ কোটি টাকার মাছের। এতে করে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মৎস্য চাষিরা।
অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নতুন মৎস্য উদ্যোক্তারা। সরকারিভাবে প্রণোদনা ও সহায়তা না পেলে ঋনের বোঝা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
এদিকে, বৃষ্টিতে নদী-নালা, খাল-বিলসহ ফসলি জমির ধানও নিমজ্জিত হয়েছে পানিতে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে জেলার ১২টি উপজেলায় ৩৬৭টি পুকুর তলিয়ে যায়। তারমধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ৩০ জনের ৫০টি পুকুর, মির্জাপুরে ৫০ জনের ৫০টি পুকুর, নাগরপুরে ৪৫ জনের ৪৫টি পুকুর, সখীপুরে ৬২ জনের ১৬৭টি পুকুর এবং ঘাটাইলে ৫৫ জনের ৫৫টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এসব পুকুর থেকে ৮২ লাখ পোনা মাছ বেরিয়ে গেছে। যার মূল্য ৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
মাছ চাষিদের হাহাকার
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের হযরত আলী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বাড়ির পাশে এবার ২ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম। দুইমাসে বিভিন্ন প্রজাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করি। গত কয়েকদিন আগে একদিনের বৃষ্টির পানিতে পুকুর তলিয়ে সব পোনা বের হয়ে যায়। এনজিও থেকে ঋন করে মাছ চাষ করেছিলাম। আমার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমি কী করব? এই ঋণ কই থেকে শোধ করব?’
ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর এলাকার মাছ চাষি মজিবুর রহমান ও হুমায়ন কবীর জানান, এ বছর ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন তারা। মাছের মধ্যে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, সরপুঁটি ও মিনার কার্ফসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ ছিল বলে জানান তারা। সেগুলো বেশ বড় হয়েছিল। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে ভারি বৃষ্টিতে পুকুর তলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পোনা মাছ লোকালয়ে বের হয়ে গেছে।
মজিবুর রহমান বলেন, ‘পুকুর নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। বৃষ্টির পানিতে স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে।’
সখীপুর উপজেলার শরিফ মিয়া ও জাকির হোসেনসহ আরও একাধিক মাছ চাষিরা জানান, গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে টানা ভারি বৃষ্টির পানিতে পুকুর তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এর আগে এমন ক্ষতি হয়নি কখনো। কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠব কিছু বুঝতে পারছেন না তারা।
তারা আরও জানান, মৎস্য অফিস থেকে কেউ খোঁজ-খবর নিতে আসেননি এখনও। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে মৎস্য অফিস থেকে সরকারি প্রণোদনা ও সহযোগিতা আশা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কথা
টাঙ্গাইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টির পানির কারণে জেলার ৩৬৭টি ছোট-বড় পুকুর তলিয়ে ৮২ লাখ পোনা মাছ লোকায়ের খাল-বিলের পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
‘ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষিরা যদি ব্যাংক ঋণের জন্য সহযোগিতা চায় তাহলে দ্রুত তা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’