গত সপ্তাহে টানা দুই দিনের বৃষ্টিপাতে পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল ঢাকার অদূরে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা।
এমন বাস্তবতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাসহ পোশাক শ্রমিকদের। বৃষ্টি না থাকলেও এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা ভোগাচ্ছে সেখানকার একটি গ্রামের কয়েক শ পরিবারকে। রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
পানির কারণে অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে উঠেছেন অন্যত্র। শিক্ষা কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সারাক্ষণ পানিতে থাকার কারণে অনেকেরই দেখা দিয়েছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপনা নির্মাণ হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কেউ সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেনি। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পানি নিষ্কাশনের পথ সচল করার জন্য চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগ ওঠা কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আউকপাড়া আদর্শ গ্রামে সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, জলাবদ্ধতায় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই এলাকার নিচু জমিগুলো ভরাট করে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় রাইজিংটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার পাশ দিয়ে নালা হয়ে এই এলাকার পানি গিয়ে পড়তো তুরাগ নদীতে, কিন্তু পানি প্রবাহের সেই পথটি বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বৃষ্টি পড়লেই বসতবাড়ির ভেতরে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
ওই এলাকার ৫৪ বছর বয়সী বিলকিস বেগম বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমাগো এলাকার সব বাড়িঘর তলায় গেছে। আমার ঘরের মইদ্দে (মধ্যে) পাঁচ থেকে ছয় দিন ধইরা হাটু পানি জইমা আছে।
‘আমার স্বামী নাই, একটা প্রতিবন্ধী মাইয়া বিছানায় শুইয়া থাকে। কখন পানিতে পইড়া যাইব সেই চিন্তায় থাকি। আজ কয়দিন ধইরা রান্নাবান্নাও করবার পারি না।
মাশরুম বেচে সংসার চালাতেন বিলকিস বেগম। ঘরে পানি উঠাতে সেই মাশরুমগুলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ একটাবার দেখবারও আইলো না। আমরা সারা জীবনডাই কষ্টের।’
ওই গ্রামের স্কুল ছাত্র কোরবান আলী বলে, ‘আমাদের এলাকার প্রায় সব ঘরবাড়িতেই পানি উঠে গেছে। কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। আজ কয়েকদিন ধরে পানির কারণে আমি স্কুলেও যেতে পারছি না।’
আবুল হাসেম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি, নিচু জমির নালা হয়ে পানি আশুলিয়ার তুরাগ নদে গিয়ে পড়তো, কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু কারখানা ও স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
‘গ্রামের শতাধিক পরিবার গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। খাওয়া, চলাফেরা, ঘুম সব বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের এমন দুরাবস্থা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’
হোসনে আরা বলেন, ‘আমার ছোট ছেলেটা পানির মধ্যে দিয়ে হেটে স্কুলে যাওয়ার কারণে পায়ে চুলকানি হইছে। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।’
সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ, ‘রাইজিংটেক্স কারখানা নালা বন্ধ করে তাদের ফ্যাক্টরি করার কারণে আমাদের গ্রামে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পরপর আমি চেয়ারম্যানকে অনেকবার ফোন করেছি এই অবস্থা দেখে যাওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি আসি বলে আর আসেননি।’
আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন মাদবর জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাকে কেউ কিছুই জানায়নি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
এদিকে যে শিল্প কারখানার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন বলে দাবি করেন।
রাইজিংটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার এইচআর অ্যাডমিন ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এই পুরো এলাকাটাই নিচু জায়গায়। এখানে কোনো সরকারি ড্রেনেজ লাইন নাই, তবে যখন কয়েক বছর আগে এখানে আমরা ফ্যাক্টরি করি, তখন পানি নিষ্কাশনের জন্য ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন মিলে একটা ড্রেন লাইন করে। সম্ভবত কোনো কিছু দিয়ে ওই ড্রেনটা বন্ধ আছে।’
তিনি জানান গত দুই দিন ধরে স্থানীয় লোকজন ও তারা পানি প্রবাহ ঠিক করার চেষ্টা করছেন। কাজ চলতেছে। দ্রুতই সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান তিনি।