বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ: জমির ন্যায্যমূল্য পেতে হয়রানির অভিযোগ মালিকদের

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:৩৬

উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তথা এসি (ল্যান্ড) খাদিজা খাতুন বলেন, ‘বড় একটি চক্র আছে আমরা জানি। আমাদের কাছে একই জমির দুই রকম দলিল আছে, দুই রকম লেখা। আমরা যাচাই-বাছাই করেই রায় দিই, তবে আমি মনে করি এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ এই চক্রের জন্য আমাদের অনেক হয়রানি হতে হয়। কিছু ভুয়া দলিল আছে যা যাচাই-বাছাই করার জন্য পাবনাতে পাঠাতে হয়, সেখানে নানা জটিলতা দেখা দেয়, যার কারণে সাধারণ জমির মালিকদের ঘুরতে হয় অনেক দিন।’

উত্তরবঙ্গের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়নে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বরে তৈরি হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। এ জন্য সরকারের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর অধীনে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। আর এসব জমির বিপরীতে ন্যায্যমূল্য পেতে মালিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী দাবিদার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ইন্টারচেঞ্জের জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় একটি দালাল চক্র। আর এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে অসহায় জমির মালিকরা। দালালদের এ চক্রের খবর প্রশাসন জানলেও দালালরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিতে পারছে না কোনো ব্যবস্থা।

বিষয়টি তদন্ত করে চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, সরকারের নতুন পরিকল্পনায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের জন্য ইন্টারচেঞ্জ তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। কোলাহলযুক্ত এলাকা ক্রমেই নীরব হয়ে পড়ছে। সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর কাজ চলমান থাকলেও এখনও অধিগ্রহণের টাকা সিংহভাগ জমি ও ভবনের মালিকরা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী দাবিদারদের ভাষ্য, জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জাল দলিল তৈরির এক বড় দালাল চক্র। এ চক্রের সদস্যরা জমির মূল মালিক যখন ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে সাত ধারা বা আট ধারা নোটিশ হাতে পায়, ঠিক সেই সময় ওই জমির ভুয়া বা জাল দলিল অথবা ভুয়া শরিকদার দিয়ে অভিযোগ করেন মূল মালিকের বিরুদ্ধে। এরপর আটকে যায় মূল মালিকের পাওনা চেক। তখন থেকে মূল মালিক বছরের পর বছর ঘুরতে থাকেন জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়।

একপর্যায়ে এই চক্রের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে হয় মূল মালিকদের। মূল মালিকের তার পাওনা টাকার একটি অংশ দিতে হয় এই চক্রের সদস্যদের। না দিলে অভিযোগের পর অভিযোগ শুনানিতে ঘুরতে হয় মূল মালিকদের, তবে এসব চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কথা বললেও কোনো প্রতিকার হয় না। তাই জিম্মি হয়ে পড়েন জমির মালিকরা।

জমির মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা তিন ভাই বাবার সম্পত্তিগুলো সমান ভাগে ভাগ করে ও বাটোয়ারা দলিল করে নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। আমার মোট ৭৬ ডেসিমেল জমি ইন্টারচেঞ্জের অধিগ্রহণ চলে যায়। আমি সাত ধারা ও আট ধারা নোটিশ পাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে।

‘আমি যখন টাকা উত্তোলন করার জন্য সিরাজগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যাই, তখন জানতে পারি যে, ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য আমার চাচাত ভাই ফেরদৌস জামান জর্জ আমার জমির মালিকানা দাবি করে একটি অভিযোগ করেছে। আমাকে শুনানির তারিখ দেয় এলএ শাখার কর্মকর্তারা। দফায় দফায় আমার কাগজ যাচাই-বাছাই করে রায় দেয় আমার পক্ষেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছি। এরপর আবার অভিযোগ আর অভিযোগ। মাসের পর মাস চলছে শুনানি। চক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত প্রস্তাব দেয় মীমাংসার জন্য। আর জর্জকে সকল ভুয়া কাগজ তৈরি করে দেয় হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী। আমি বৃদ্ধ মানুষ ডিসি অফিসের এলএ শাখায় ঘুরতে ঘুরতে আজ আমি ক্লান্ত। আমি আমার সুবিচার চাই।’

সাইদুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ২০২০ সালে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ৭১ ডেসিমেল জমি খাজনা খারিজ করে ভোগদখলে আছি। হঠাৎ অধিগ্রহণে চলে যাওয়ার পর এলএ শাখা থেকে সাত ও আট ধারা নোটিশ পাওয়ার পর এলএ শাখায় গেলে জানতে পারি, আমার জমির নাকি ওয়ারিশান আছে।

‘এরপর কিছু পাবনার ও তাড়াশের জাল দলিল দাখিল করেছে তারা। বছরখানেক ধরে এই জমির টাকার জন্য প্রতিনিয়ত ঘুরতে হচ্ছে ডিসি অফিসের ভূমি অধিগ্রহণ শাখাতে। আর এখন আমাকে এই চক্রের প্রধান প্রফেসর আনিসুর রহমান প্রস্তাব করছেন তাদের সঙ্গে মীমাংসা করার জন্য, কিন্তু আমি কখনোই এ চক্রের সঙ্গে মীমাংসায় যাব না।’

শিক্ষক নুরুল হুদা, সাইদুর রহমান, আলম হোসেন, নেজাব আলী ও তোফাজ্জল হোসেনের মতো অনেক জমির মালিকের অভিযোগ, তারা জিম্মি হয়ে আছেন চক্রের হাতে।

এ চক্রের হোতা হিসেবে পরিচিত উল্লাপাড়া ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর উল্লাপাড়া থেকে বদলি করে আমাকে দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। আমি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত না। আমি সরকারি চাকরি করি, আমি কোনো চক্রের সঙ্গে থাকতে পারি না।’

চক্রের অন্যতম সদস্য হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা করি, আমি কখনোই কোনো চক্রের সঙ্গে নেই, তবে এলাকায় দরবার সালিশের জন্য দুই-একটা কাজ করতে হয়।’

জানতে চাইলে উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা খাতুন বলেন, ‘বড় একটি চক্র আছে আমরা জানি। আমাদের কাছে একই জমির দুই রকম দলিল আছে, দুই রকম লেখা। আমরা যাচাই-বাছাই করেই রায় দিই, তবে আমি মনে করি এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

‘কারণ এই চক্রের জন্য আমাদের অনেক হয়রানি হতে হয়। কিছু ভুয়া দলিল আছে যা যাচাই-বাছাই করার জন্য পাবনাতে পাঠাতে হয়। সেখানে নানা জটিলতা দেখা দেয়, যার কারণে সাধারণ জমির মালিকদের ঘুরতে হয় অনেক দিন।’

উল্লপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘ভূমি অপরাধ নামে নতুন একটি আইন তৈরি হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে, তবে আমাদের ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর