রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশে রেখে চিকিৎসার সব সুযোগ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী।
এভারকেয়ার হাসপাতালে সোমবার সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘উনার (খালেদা) মূল অসুখ হচ্ছে (লিভার) সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশন। যতক্ষণ পর্যন্ত সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশনের সঠিক, সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত উনার অবস্থার অবনতি এবং জটিলতা হতেই থাকবে।’
তিনি জানান, চূড়ান্ত ধাপে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা প্রতিস্থাপন করতে হবে।
এ চিকিৎসক বলেন, যেহেতু খালেদা জিয়ার সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশনের কোনো চিকিৎসা হয়নি, সে কারণে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই আরেকটা অবধারিত জটিলতা হিসেবে তার পেটে পানি আসা শুরু হয়, যেটাকে অ্যাসাইটিস বলা হয়।
তিনি জানান, চলতি বছরের আগস্টের শুরু থেকে খালেদা জিয়ার অবস্থা আবার অবনতি হতে থাকে। ৯ আগস্ট তাকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তার অবস্থা খারাপ হয় এবং তার পেটের পানি জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হয়।
সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশনে অ্যাসাইটিস হলে তা জীবনঝুঁকি তৈরি করে জানিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার পেটে যে জীবাণুর সংক্রমণ তথা এসবিপি হয়, তা দ্রুত উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পাঁচ দিন পর ১৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার আরেকটি ভয়াবহ জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেই অবস্থাটাও পরবর্তী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
তিনি জানান, বিভিন্ন ব্যবস্থা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার পেটের পানি বাড়তে থাকে এবং তরল তার পেট থেকে বের হয়ে ফুসফুসের ওপরও চাপ সৃষ্টি করে, যার জন্য পরপর দুবার তাকে সিসিউতে স্থানান্তর করা হয় বিপুল তরল অপসারণের জন্য।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণ হয় জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, শুরুতে ভাইরাস এবং পরবর্তী সময়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। এখনও খালেদা জিয়ার পেটে পানি আছে, বুকে কিছু পানি আছে। তার ফুসফুসে সংক্রমণের চিকিৎসা চলছে, যার জন্য তার মাঝে মাঝেই অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশনের কারণে খালেদা জিয়ার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়, হিমোগ্লোবিন কমে যায় জানিয়ে চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, তাকে সম্প্রতি চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
খালেদা জিয়ার এ চিকিৎসক জানান, তিনি যা বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও জটিল ও কঠিন। মেডিক্যাল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এমন একটা অবস্থায় আমরা উপনীত হয়েছি, যে অবস্থায় চিকিৎসার সব অপশন (সুযোগ) প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আর আমাদের হাতে কোনো অপশন নেই।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আহ্বান জানিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের এ সদস্য বলেন, বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হলে সম্ভবত খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে।