সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে নির্বাচনকে সংঘাতহীন করতে সব দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের শাসনতন্ত্র মেনে নির্বাচন হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দল জানতে চেয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে। আমরা তাদের জানিয়েছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তবে সংঘাতহীন হবে কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এজন্য সব দলকে সহযোগিতার পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তবেই সংঘাতহীন নির্বাচন হবে।’
মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। দুনিয়াতে যেভাবে নির্বাচন হয় শাসনতন্ত্র মেনে, আমরা সেভাবে নির্বাচন করব বলে তাদের জানিয়েছি। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই।’
পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা সবাই অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। তারা এসেছেন একটা অবাধ নির্বাচন অ্যাসেসমেন্ট করতে। তারা জানতে এসেছেন একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা কী কী কাজ করেছি। তাদের নিজেদের কোনো মতামত জানাতে তারা আসেননি। আমরা জানিয়েছি আমাদের মতো দেশে বেশি সংঘাত হয়, নির্বাচন হলেই সংঘাত হয়।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব। আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। যেখানে কোনো ভায়োলেন্সও হবে না। কিন্তু শুধু আমরা চাইলেই তা হবে না। সব দল ও মতের স্বঃতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, ভোট বর্জন করতে। আমরা চাই সবাই নির্বাচন করুক। যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি সে দল জয়লাভ করবে এবং সরকার গঠন করবে। আর তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
পর্যবেক্ষক দল সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বার্তা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিছু বলেনি। এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি আমাদের। তবে আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে অংশ নিক। কিন্তু আমরা জোর করে কাউকে বলি না, নির্বাচনে অংশ নাও।’
সব দলকে ভোটে নিয়ে আসতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘এ ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে…। যারা নির্বাচন করতে চায় আমাদের দিক থেকে তাদেরকে স্বাগতম। আসা না আসা তাদের সিদ্ধান্ত।’
ভোট কারচুপি নিয়ে এবং বেচাকেনা নিয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে থাকবে বার্তা দিয়ে মোমেন বলেন, ‘আমরা কাউকে জোর করে ভোট দেয়াই না বা কোনো দলের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য জোর করব না। আমরা চাই জনগণ নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোট দেবে। এ রকম ব্যবস্থা আমরা করেছি।
‘আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, ক্যাম্পেইন প্রসেসে যেন কোনো ধরনের ভায়োলেন্স না হয়। যেন ভোট বেচাকেনা না হয় বা ভোট কারচুপি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। আমরা চাই না কেউ জোর করে কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করুক।’
এর আগে রোববার বিকেল তিনটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)-এর যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের ছয় সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় পৌঁছান। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তারা সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করবেন।
এনডিআই এবং আইআরআই হল নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা; যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করতে কাজ করে। সংস্থা দুটি সম্মিলিতভাবে গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
প্রতিনিধি দলের কো-চেয়ার স্টেট ফর সাউথ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কার্ল এফ ইনডারফুর্থ বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই দেশটিকে আজ সমর্থনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।’
আইআরআই ও এনডিআই মিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি অবস্থার মূল্যায়ন শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বিভিন্ন অংশীজনের কথা শুনতে এবং একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমাদের সমর্থন জানাতে এসেছি।’
প্রতিনিধিদলে কো-চেয়ার হিসেবে আছেন ইনডারফুর্থ এবং ইউএসএআইডি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সাবেক ডেপুটি বনি গ্লিক। আরও আছেন মালয়েশিয়ার সাবেক হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাবেক সহযোগী কাউন্সেল জামিল জাফর, এশিয়া-প্যাসিফিকের এনডিআই রিজিওনাল ডিরেক্টর মনপ্রীত সিং আনন্দ ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আইআরআইয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর জোহানা কাও।