বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) এক শিক্ষককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা চক্রের নারীসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এ সময় অপহৃত শিক্ষককেও উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর কাজীবাড়ি টি অ্যান্ড টি টাওয়ার এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার ও ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে এটিইউ।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- বিলকিস ওরফে তানিয়া, মো. বিপ্লব, ইব্রাহিম হোসেন রাজু, লিংকন খলিফা ও আমির শেখ। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ, লাঠি, হাতুড়ি ও রশি উদ্ধার করা হয়।
এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) মোহাম্মাদ ছানোয়ার হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে বিলকিস ওরফে তানিয়ার ফেসবুকে পরিচয় হয়। তানিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিক্ষক তার এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় যান। সেখানে থেকে তানিয়া বাউবিতে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে চান বলে ওই শিক্ষককে দক্ষিণ বনশ্রীর ১০ তলা মার্কেটের সামনে ডেকে নেন।
ছানোয়ার হোসেন জানান, ওই শিক্ষক সেখানে গেলে তানিয়া তাদের বাসায় যেতে বলেন। তিনি যেতে রাজি না হলে সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা অন্যদের সহযোগিতায় শিক্ষককে অপহরণ করে দক্ষিণ বনশ্রীর কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি বাসার ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সেখানে তারা ওই শিক্ষককে হত্যার হুমকিসহ হাত-পা বেঁধে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং অপহৃতের কাছে থাকা নগদ ৩ হাজার টাকা ও বিকাশ একাউন্টে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
তিনি জানান, এ ছাড়া ওই শিক্ষককে নগ্ন করে মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। নির্যাতন থেকে বাঁচতে গ্রেপ্তার অপহরণ চক্রের সদস্যরা ওই শিক্ষককে তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ এনে দিতে বলে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপহৃত শিক্ষক বাধ্য হয়ে তার বোন জামাইকে নিজের প্রয়োজনের কথা বলে আসামিদের দেয়া বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। কিন্তু তার ফোন বন্ধ থাকায় এবং তিনি বাসায় না ফেরায় তার বোন জামাইয়ের সন্দেহ হয়। পরে তিনি রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তিনি জানান, পরদিন নির্যাতন থেকে বাচঁতে অপহৃত ওই শিক্ষক নিজের মোবাইল নম্বর থেকে আবারও ২ লাখ টাকা পাঠাতে বললে তার বোন জামাই বিকাশের মাধ্যমে দুই দফায় ৪৫ হাজার টাকা পাঠান। মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পরও তিনি ফিরে না আসায় এবং অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা আরও মুক্তিপণ দাবি করতে থাকায় তার স্বজনেরা বিষয়টি এটিইউকে জানায়।
এটিইউর পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি অনুসন্ধান করে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও নজরদারির ভিত্তিতে অপহরণ চক্র ও ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে শুক্রবার রাতে খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় দক্ষিণ বনশ্রীর একটি ফ্ল্যাট থেকে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’