নেত্রকোনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক মুফতি মুনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শনিবার ওই শিক্ষকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ড দাবি করেন সিটিটিসির কর্মকর্তা।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচকাটা গ্রাম থেকে তুলে নেয় সিটিটিসির সদস্যরা।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) লুৎফর রহমান বলেন, ‘মুফতি মুনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় সুনির্দিষ্ট মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি আনসার আল ইসলাম নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।’
তবে মুনিরুলের পরিবার দাবি, মুনিরুলকে কেন এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের কিছুই জানানো হয়নি।
মুনিরুলের বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে চারজন লোক এসে মুনিরুলকে বাইরে থাকা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এ সময় মুনিরুলের মোবাইল ফোনটিও তারা নিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘তখন ওই চারজন আমাদের বলেন- মুনিরুলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু গত শুক্রবার স্থানীয় ইউপি সদস্য সমর আলীকে নিয়ে কলমাকান্দা থানায় গিয়েও মুনিরুলের বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।’
কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচকাটা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে মুনিরুল ফেনীর একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি পাস করেন। এরপর গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে একটি অনলাইন পোর্টালে চাকরি করেন বছরখানেক। ওই চাকরি ছেড়ে একবছর আগে গ্রামে চলে যান তিনি। গ্রামে থেকে ওয়াজ-মাহফিলে বয়ান করতেন মুনিরুল।
বাড়িতে ফিরে তিনি ওয়াজ-মাহফিল ছাড়াও রাসায়নিক সার নিয়ে গবেষণা করতেন বলে জানান মুনিরুলের বাবা জাকির হোসেন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুনিরুল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্য। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে বেশকিছু জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে।’
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘মুনিরুলকে সিটিটিসির সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ওই মামলাটি করা হয়। এছাড়া সে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলেও জানতে পেরেছি।’