বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টানা বৃষ্টিতে ঘরবন্দি, উপার্জন বন্ধ হয়ে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

  • প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার   
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ১৭:৫৭

কমলগঞ্জ উপজেলার রিকশাচালক সন্তোষ বলেন, ‘এই বাদলের মধ্যে দরকার ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা নিয়ে বাইরে ভিজছি। অথচ অন্য সময় যেখানে এমনিতে সাত-আটশ’ টাকা আয় হয়, সেখানে দিন-রাত মিলিয়ে ৩০০ টাকাও ইনকাম হচ্ছে না।’

সিলেটের মৌলভীবাজারে বুধবার থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ঘর থেকে বের হতে না পারায় গত কয়েকদিন ধরে উপার্জন বন্ধ তাদের। পরিবারের খরচ সামলানোর পাশাপালি অনেকের রয়েছে ঋণের চাপ। এমতাবস্থায় সবকিছু মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা।

টানা বৃষ্টির কারণে মৌলভীবাজারসহ সারা সিলেটই ভাসছে জলে। বৃষ্টির যেন থামার নাম নেই! কমলেও ইলশে গুঁড়ি থামছেই না। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া হচ্ছে না, কাজের জন্য বড়রা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। একদিন ভিজে পরের দিন জ্বরে ধরার শঙ্কায় রিকশা-ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হওয়াটা কষ্টকর চালকদের জন্য। সবজি বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হতে পারছেন না। বাজার করার প্রয়োজন হলে অবস্থাসম্পন্নরা বড় বাজার থেকে কয়েকদিনের বাজার একবারে করে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। ফলে জেলার শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়েছে। অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে বের হয়েছেন কাজের সন্ধানে।

কী বলছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের রাজমিস্ত্রী গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘শনিবার কাজে গিয়েও ফিরে এসেছি বৃষ্টির কারণে। এই বৃষ্টিতে কাজ করা সম্ভব নয়। বৃষ্টির মধ্যে কোনোমতে কাজে উপস্থিত হই। সেখানে উপস্থিত হয়ে জানতে পারি, কাজ হবে না। অন্যরাও বৃষ্টির জন্য কাজে আসতে পারেনি।’

কুলাউড়ার উপজেলার ঠেলাচালক কুমার বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে তিন দিনই ঠেলা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু আমার ঠেলার প্রয়োজন নেই কারও। আর কেনই বা ঠেলায় মালামাল তুলবে? বৃষ্টির মধ্যে মালপত্র ভিজিয়ে কেউ কি ঠেলা ডাকবে?’

‘এদিকে কাজ না থাকায় ইনকামও বন্ধ। পেট তো আর বন্ধ নেই। বাড়িতে অতগুলো পেট চালাতে হয়। অথচ পকেটের টাকা শেষ। কী কষ্টে যে রয়েছি, তা বোঝানো যাবে না!’

কমলগঞ্জ উপজেলার রিকশাচালক সন্তোষ বলেন, ‘এই বাদলের মধ্যে দরকার ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা নিয়ে বাইরে ভিজছি। অথচ অন্য সময় যেখানে এমনিতে সাত-আটশ’ টাকা আয় হয়, সেখানে দিন-রাত মিলিয়ে ৩০০ টাকাও ইনকাম হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আর কয়দিন এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। ভাড়ার রিকশা চালাই। মালিককে কী দেব? আর নিজে কী নেব? পকেটে টাকাই যদি না থাকে তাহলে সংসার চালাব কী করে?’

বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মৌলভীবাজার শহরের কেউ। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

হতাশা নিয়ে কুলাউড়া উপজেলার সবজি বিক্রেতা আশিক মিয়া বলেন, ‘সারা দিন বৃষ্টি থাকার কারণে গত তিন দিন ধরে বেচাবিক্রি হচ্ছে না। বৃষ্টিতে অনেক সবজি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। লাভ করব কী, মূলধনই চলে যাচ্ছে!’

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জের চা-দোকানী জামাল মিয়া বলেন, ‘যা কিছু হয় তাতে গরীবের ক্ষতি হয় বেশি। ধনীদের কিচ্ছু হয় না। বন্যা হলে, বৃষ্টি হলে, করোনা হলে, খরা এলে মরবে শুধু গরীবরা। আমার চা-পানের দোকানে খরিদ্দার আসা একেবারেই কমে গেছে। কেউ ঘর থেকে বেরই হচ্ছে না। তাহলে কার কাছে বিক্রি করব?’

টানা বৃষ্টির কারণে ঘরে বসেই দিন পার করতে হচ্ছে দিনমজুর হরিচানের। কয়েকদিন ধরে কোনো কাজ না থাকায় সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। কথা বলার সময় তারও কণ্ঠে ঝরল একরাশ হতাশা।

আবহাওয়া অফিস কী বলছে

টানা বৃষ্টিতে সারা দেশের মতো সিলেটের অনেক জায়গাতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কবে কমবে- এই প্রশ্ন এখন প্রত্যেকের মুখে মুখে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মুখিয়ে রয়েছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ।

শনিবার ভোর থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি হলেও আগামীকাল রোববার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আজ (শনিবার) সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও আগামীকাল থেকে তা আরও কমে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর