যাত্রীসংকটে প্রায় আড়াই মাস ধরে বরগুনার আমতলী-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রা ও অল্প খরচে মালপত্র আনা-নেয়ার নিরাপদ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
দ্রুত এ রুটে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই আমতলী-ঢাকা রুটে লঞ্চ সার্ভিস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যাত্রী না থাকায় আমতলী-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ছয় মাস ধরে অনিয়মিতভাবে একটি লঞ্চ চলাচল করলেও গত ২০ জুলাই মালিক কর্তৃপক্ষ একেবারেই বন্ধ করে দেয়।
ব্যবসায়ীরা জানায়, এতে দক্ষিণাঞ্চল আমতলী, তালতলী, বরগুনা, কলাপাড়া ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার নৌপথের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়েই তারা সড়ক পথে চলাচল শুরু করেন।
এদিকে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে স্বল্প খরচে দক্ষিণাঞ্চলে মালপত্র আনা-নেয়া করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বেশি খরচ দিয়ে তাদের মালপত্র আনতে হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানান।
আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। নেই কোনো যাত্রীর কোলাহল। লঞ্চ টামিনাল ফাঁকা। লঞ্চঘাটের সিঁড়িতে ছাগল শুয়ে আছে।
লঞ্চযাত্রী সবুজ, কামরুল, জয়নব ও শাহ আলম জানান, কাজের সন্ধানে ঢাকা যেতে হয় তাদের, কিন্তু লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে খুব সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত আমতলী-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু করার দাবি জানান তারা।
হিরামনি আক্তার বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় গাড়িতে উঠতে পারি না। তাই লঞ্চে ঢাকায় যেতাম কিন্তু লঞ্চের নিরাপদ যাত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যা পড়েছি।’
আমতলী মাতৃছোয়া বস্ত্রালয়ের মালিক জিএম মুছা বলেন, ‘লঞ্চে অল্প খরচে ঢাকা থেকে মালপত্র আনা যেত, কিন্তু সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশি খরচে সড়কপথে মালপত্র আনতে হচ্ছে।
আমতলী লঞ্চঘাট সুপার ভাইজার শহীদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমতলী লঞ্চঘাটের শতাধিক শ্রমিক কঠিন বিপাকে পড়েছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।’
ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন-অর রশিদ বলেন, ‘একদিকে যাত্রীসংকট, অন্যদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে লোকসানের মুখে গত আড়াই মাস ধরে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ করে রেখেছি। লঞ্চ চালালে ওই রুটে দৈনিক এক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়।’
সরকার যদি তেলের দাম কিছুটা কমায়, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে আবার লঞ্চ চালু করা হবে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটি)-এর বরগুনা কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।