বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শূন্যরেখায় অবস্থান রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবীর, খাবার পাঠান জনপ্রতিনিধি

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ২২:১৭

র‌্যাবের ভাষ্য, এক বাবুলের হাত ধরেই প্রতি মাসে দেশে ইয়াবার চালান ঢোকে ৪০ থেকে ৫০ লাখ। সবমিলিয়ে নবীর ছত্রছায়ায় দেশে প্রতিমাসে কয়েক কোটি ইয়াবার চালান ঢোকে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার শূন্যরেখায় বসে এক ব্যক্তি দেশে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ (আইস), অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচাল করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব বলছে, এই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাত ধরেই সারা দেশে পৌঁছে যাচ্ছে কোটি কোটি পিস ইয়াবা। তার সহায়তায় আছেন একজন জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন।

অভিযুক্ত ওই রোহিঙ্গা হলেন নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেন। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে তিনি কক্সবাজার পালংখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফরুল ইসলাম ওরফে বাবুলসহ চার থেকে পাঁচ রোহিঙ্গাকে দিয়ে তা বিক্রি করছেন বিভিন্ন স্থানে।

র‌্যাবের ভাষ্য, এক বাবুলের হাত ধরেই প্রতি মাসে দেশে ইয়াবার চালান ঢোকে ৪০ থেকে ৫০ লাখ। সবমিলিয়ে নবীর ছত্রছায়ায় দেশে প্রতিমাসে কয়েক কোটি ইয়াবার চালান ঢোকে।

জানা গেছে, জনপ্রতিনিধি বাবুল প্রায় সব সময়ই থাকতেন নাফ নদীতে বড় একটি নৌকায়। তিনি নৌকায় বসে এলাকাসহ চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে নবীন হোসেনের সহযোগী বাবুলকে র‍্যাব গ্রেপ্তারের পর প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এ সব চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়।

র‌্যাব-১৫ টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ বাবুল মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে। তাকে গ্রেপ্তারের পরে সকালে এলাকাবাসী আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে রোহিঙ্গা নবী হোসেনকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি।

র‌্যাব বলছে, সন্ত্রাসী নবী ও তার বেশ কিছু সঙ্গীসহ শুন্য রেখায় অবস্থান করেছেন। সেখানে খাবারসহ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠাতেন বাবুল মেম্বার। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ হাজারো লোক কাজ করে নবীনের হয়ে। দেশে যে পরিমাণ ইয়াবার চালান ঢোকে তার ৯০ শতাংশ ইয়াবার কারবার নবী হোসেন বাহিনীর কব্জায়।

র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী নবী শূন্যরেখায় অবস্থান করেছে। সেখানে বসে মিয়ানমার থেকে দেশে মাদকের চোরাচালান ঢোকাচ্ছেন ৪-৫ জনকে দিয়ে। এই ৪-৫ জন রোহিঙ্গার সহায়তায় সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই মাদক। শুধু ইয়াবা না অস্ত্র, স্বর্ণ, ক্রিস্টাল মেথও (আইস) আসে নবী হোসেনের মাধ্যমে।’

নবী হোসেনকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি এমন জায়গায় অবস্থান করেছেন এটা দুর্গম এলাকা। এখানে অভিযান চালানো মুশকিল। এ ছাড়া অভিযানের তথ্য পেলেই তিনি মিয়ানমারে চলে যান। তখন আমাদের কিছু করার থাকে না।

‘নবী মূলত রোহিঙ্গা হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তিনি মাদক কারবারে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে সীমান্তের গহীন অরণ্যে চলে যায়। সেখানে বসেই মাদকসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।’

বাবুলের বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে নবী হোসেন খাবারসহ বেঁচে থাকার সামগ্রী পান না। নবীকে খাবারসহ বেঁচে থাকার সব সামগ্রী বাবুল মেম্বার বাংলাদেশ থেকে পাঠান। বাবুল ২০০৫ সাল থেকে মাদক এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন। ২০১৭ সালে এলাকার অপর এক মাদক কারবারি লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পলাতক তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।’

তিনি বলেন, ‘নবীর সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে বাবুল বড় আকারে মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাবুল নবী হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে রাতের আধারে নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছেন।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি কিংবা কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এই সবকিছুর মূলে নবী হোসেনকেই দায়ী করছেন সাধারণ রোহিঙ্গা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে এই নবী হোসেন বাহিনী।

গত পাঁচ বছরে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়েও নবী হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

কে এই নবী হোসেন

র‌্যাব জানিয়েছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আট লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে নবী হোসেন একজন। তার বাড়ি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের ঢেকুবনিয়ায়। বাবার নাম মোস্তাক আহমদ। ২০১৮ সালের শুরুতে মিয়ানমার থেকে আশ্রয়শিবিরে এবং টেকনাফে ইয়াবার বড় চালান আনা শুরু করেন নবী হোসেন।

তখন টেকনাফের একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন নবী। আশ্রয়শিবিরে নিজের নামে গড়ে তোলেন ‘নবী হোসেন’ বাহিনী। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান নেন। এখন তিনি শূন্য রেখায় অবস্থান করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর