শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক কমন রুমসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে অফিসে এসি লাগানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, তাদের না জানিয়েই লাগানো হয়েছে ওইসব এসি।
এসি লাগানোর ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল জবির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। বারবার বৈদ্যুতিক তার পুড়ে যাওয়া, ট্রান্সমিটার ডাউন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে নিয়মিত বিরতিতে। তবে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার অনুমতি ছাড়া জবির কোনো বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও দপ্তরে এসি লাগানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে খুব শীগগিরই একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ট্রেজারার কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসি লাগাতে গেলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সংকীর্ণ জায়গা। বিশেষ করে নতুন ভবনে অনেক রুম আছে, যেখানে আসলেই এসি দরকার। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক বিভাগে প্রয়োজনের বাইরেও এসি লাগানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা। সেটা মাথায় রেখে এর আগেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজন ব্যতীত যেন কোথাও এসি লাগানো না হয়, সেটা আমরা খেয়াল রাখব। বিভাগ বা দপ্তর যারাই লাগাতে চাইবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব লোক আছে, তারা লাগিয়ে দেবে।’
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘জবিতে এসি লাগানোর হিড়িক, জানে না প্রশাসন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। ওই সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে এসি লাগানোর কারণ, প্রশাসনিক অনুমতি, বিদ্যুতের সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়। স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বশীলদের মন্তব্যও প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
সে সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনেই এক হাজার টনের বেশি এসি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নিয়মবহির্ভূতভাবে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া গণিত ভবন, বিজ্ঞান ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন মিলিয়ে প্রায় চারশো টনের বেশি এসি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই একটি মাত্র সাব-স্টেশন থেকে পুরো ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। সেটির কার্যক্ষমতা কমতে কমতে বর্তমানে প্রায় ১২০০ কেভিতে নেমেছে, যা কোনোভাবেই ভবনগুলো বৈদ্যুতিক লোড নিতে পারত না। পরে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য সাব-স্টেশনটি ২০০০ কেভি ধারণক্ষমতার করা হয়েছে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব এসি ব্যবহারে দৈনিক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে নতুন স্থাপনকৃত বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনটিও। ফলে কিছুদিন পরপরই ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে। বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াতে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাবলগুলোর আংশিক পরিবর্তন করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
শুধু বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা নয়, অনুমোদনহীন এসব এসি ব্যবহারে প্রতি মাসে বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলও গচ্চা দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে।
চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত মাত্রায় অনুমোদনহীন এসির ব্যবহারের ফলে এর পরের তিন মাসে তা প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সতের লাখ টাকা।
জবির প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বেশিরভাগ তারই অনেক পুরনো। কোনো ভবনে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হয়ে গেলে ওইসব তার লোড নিতে পারে না। তখন বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। প্রকৌশল দপ্তরকে না জানিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এসি লাগিয়েছে। এতে তারগুলোর ওপর লোড আরও বেড়েছে। যার ফলে শর্ট সার্কিটসহ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়েছে। আমরা বারবার বলার পরও তারা শোনেনি। এখন সমস্যা হলে আমাদেরকে জানানো হচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, অনুমতি নিয়ে এসি লাগাতে বলেছি। রুটিন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে আবারও প্রয়োজনে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।’