সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসার আন্দোলন নয়, এটি খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার আন্দোলনও নয়। এই আন্দোলন করছি মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য।’
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) মিলনায়তের বুধবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ‘পেশাজীবী কনভেনশন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দিল্লি আছে, আমরাও আছি; আমরা আছি, দিল্লিও আছে- এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আসলে কী বুঝাতে চাচ্ছেন? দিল্লি কি আপনাদের জানিয়েছে- এভাবে অপকর্ম করতে থাকো? দিল্লি কি বলে দিয়েছে- দরকার নেই নির্বাচনের? জোর করেই নির্বাচন ঘোষণা করে দাও? বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ তারা (আওয়ামী লীগ) এত বেশি পাজেলড, তাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- কোনো ভয় নেই, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। এ কথার মাধ্যমে তারা এটা স্বীকার করলেন- এখন পর্যন্ত তারা ভয়ে ছিলেন। আপস হয়েছে কি হয়নি, সেটা আপনারা বললেন। এর আগে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন- আলোচনা, বৈঠক হয়েছে। আসলে কোনো বৈঠক বা আলোচনা হয়নি।’
‘বর্তমান সরকার দখলদার’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার আমরা নিন্দা জানিয়েছি। তার বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি সত্য কথাও বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে একটি কথা হচ্ছে, এই দেশে যা ঘটে তা তার নির্দেশেই ঘটে। পুরো বিষয়টি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’
‘দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ সারা বিশ্বে দেখতে চায়, তারাও তাদের (আওয়ামী লীগ) আর বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র ও মুক্ত সমাজের জন্য আন্দোলন করছি। আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্টদের পাল্লায় আমরা পড়েছি। রং হেডেড পার্সন আমাদের শাসন করছে। তারা সংবিধানকে বিকৃত করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তারা এটা করেছে। এবারও সব একইভাবে সাজিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশে ও বিদেশে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা দেশে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, চুরি- সব মিলিয়ে তারা দেশের অর্থনীতিকে রসাতলে নিয়ে গেছে। হাসপাতালে গেলে মানুষ চিকিৎসাসেবা পায় না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘গত ২ বছর ধরে আমরা রাস্তায় আন্দোলন করছি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে আমাদের ২২ জনের প্রাণ গেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তার মানে এই নয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মানুষের ওপর কেউ আঘাত করলে আমরা তা প্রত্যাখান করব না। আজ সময় এসেছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন বাতিল করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো, আইনজীবী- সবাই যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখতে বলেছে, তখন এক ব্যক্তি শেখ হাসিনা তা পরিবর্তন করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, যেমন করেই হোক ক্ষমতায় থাকা।’
‘আগামী নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক করতে হবে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার আগে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করুন। তারপরে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আসবে। তার আগে নয়।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্ত্যে দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি প্রমুখ।