‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে নতুন ছাত্র সংগঠন ঘোষণার ঘণ্টা পার না হতেই মারধরের শিকার হলেন আহ্বায়ক আখতার হোসেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সহসভাপতি।
সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, তবে রনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বুধবার বেলা একটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সংগঠনটির সদস্য হাসিব আল ইসলাম।
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়।
হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন এবং নতুন সংগঠনের র্যালি শেষে বৃষ্টি আসলে আমরা টিএসসিতে অবস্থান নিই। এরপর সবাই নিজেদের বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বের হই। আখতার ভাই সবার সামনে ছিল। তিনি যখন পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে তখন ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী বাইকে করে এসে ভাইয়ের ওপর অতর্কিত হামলা করে।
‘এ সময় মেয়েরাসহ আরও যারা এগিয়ে আসে, তাদের গায়েও হাত তোলে তারা। আখতার ভাইয়ের মুখ থেকে রক্ত পড়তে দেখে তারা চলে যায়। পরে আমরা ভাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।’
হাসিব জানান, ‘এই হামলায় একজনের নাম-পরিচয় আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তিনি হলেন জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের রাশেদুজ্জামান রনি।’
এ বিষয়ে রনি বলেন, ‘আমি ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে হলে চলে আসি। টিএসসির দিকে আমি যাইওনি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এই ঘটনার সাথে যুক্ত নই।’
হামলায় নিজের অনুসারীরা জড়িত নয় দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনায় আমাদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত নয়। কয়েক দিন আগে আখতার নিজে আমাকে ফোন করে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। আমি তাকে বলেছি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দুপুরে তারা ডাকসুর সামনে সংবাদ সম্মেলন করল। এরপরে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য গেল। কোথাও তো তাদেরকে কেউ বাধা প্রদান করেনি। তাদেরকে মারার ইচ্ছা থাকলে তো আমরা তাদের এসব করতে দিতাম না।
‘হামলা করার ইচ্ছাই যদি থাকত তাহলে তো আমরা সেখানেই তাদের ওপর হামলা করতাম। এই হামলার সাথে ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত না। কেন তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।’
সৈকত বলেন, ‘তাদের ওপর যদি হামলা হয়ে থাকে, আমরা সেটার তীব্র নিন্দা জানাই। তারা তো আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে না। তারা নুরু (নুরুল হক নুর) থেকে আলাদা হয়ে আসছে। সে (আখতার) প্রতিষ্ঠিত হলে তো আমাদের জন্যই লাভ। তাদের গায়ে কেন আমরা হামলা করতে যাব? এটা তো যুক্তিসঙ্গতও না।’
এর আগে ডাকসু ভবনের সামনে ‘শিক্ষা’, ‘শক্তি’ ও ‘মুক্তি’কে মূলনীতি ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে নতুন একটি ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। তারা নিজেদের দাবি করছে নির্দলীয় হিসেবে। তারা বলছেন, কোন দলের লেজুড়বৃত্তিও তারা করবেন না।
এই সংগঠনের নেতৃত্বে আখতার হোসেন ছাড়াও আছেন সংগঠক নাহিদ ইসলাম।
বেলা ১১টায় মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সেখানে আগে থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় পৌনে ১২টায় ডাকসুর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রশক্তির নেতারা।
ছাত্রশক্তির আত্মপ্রকাশের দিনে নেতা-কর্মীদের স্লোগান। ছবি: নিউজবাংলা
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকটিভিস্ট তুহিন খান সংগঠনটির ২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে আখতার হোসেনকে করা হয় আহ্বায়ক। আর নাহিদ ইসলামকে করা হয় সদস্য সচিব।
ওই সময় আগামী তিন মাসের জন্য ৩৩ সদস্যের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছে আসিফ মাহমুদ সজিবকে। তিনি এর আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে আবু বাকের মজুমদারকে। কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতাদের অনেকেই এর আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
নতুন এই ছাত্র সংগঠন গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়েছে। এ সময়ের ছাত্র রাজনীতি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি ও প্রতিক্রিয়া ছাড়া শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো সামষ্টিক ভিশন তৈরি করতে পারেনি। ছাত্র রাজনীতির স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ধারা বিকশিত না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বিকাশের জন্যই আমরা নতুন এই প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
লিখিত বক্তব্যে আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের রাজনৈতিক অবস্থান মধ্যমপন্থি ও গণতান্ত্রিক। দায়, দরদ ও মানবিক মর্যদাভিত্তিক রাজনৈতিক সমাজ গঠন করাই আমাদের সংগঠনের আদর্শ। আর শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণ এবং রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করাই আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’