‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম আলুর বীজ রোপন করা শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) আগাম আলু রোপনের জন্য বীজ কৃষকদের দেয় না। এ কারণে বাধ্য হয়ে মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আনা আলুর বীজ দিয়ে আগাম আলুর আবাদ করতে হয়, কিন্তু বাইরের আলুর বীজ নিম্ন মানের হয়।’
কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল আলী।
তিনি বলেন, ‘মোট এক একর জমিতে আগাম আমন ও পুথি কচু আবাদ করেছি। ধান ও কচুতে ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা ও কচু তোলার পর সেই জমি তৈরি করছি আগাম আলু চাষ করার জন্য।’
‘আমার এক একর জমিতে আগাম আলুর আবাদ করার জন্য এক টন বীজের প্রয়োজন হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত এক কেজি আলুরও বীজ ব্যবস্থা করতে পারি নাই। বিএডিসির বীজের মান ভালো থাকে। তাদের বীজ ফলনও ভালো হয়। পাশাপাশি আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। আর বাইরের বীজ নিম্ন মানের হওয়ায় নষ্ট হয়।’
দিনাজপুর জেলার উৎপাদিত খাদ্য-শস্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এমনকি এ জেলার খাদ্য-শস্য বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। বর্তমানে চলছে আমন মৌসুম। এরই মধ্যে আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমন ধান কেটে জমিতে আগাম আলু আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠজুড়ে রয়েছে কাঁচা-পাকা আমন ধান। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ধান কাটা ও মাড়াই হবে। এরই মধ্যে কিছু কৃষক নিজের পাকা ধান ঘরে তুলেছেন। আর সেই জমিগুলো আগাম আলুর জন্য ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ দিচ্ছেন। এখন শুধু ভালো মানের আলুর বীজের অপেক্ষায় কৃষকরা। বীজ হাতে পেলেই রোপন কার্যক্রম শুরু করবেন তারা।
উলিপুর গ্রামের কৃষক মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আগাম আলুর বীজটা হাতে পেলে ভালো হতো। বিএডিসির আগাম আলুর বীজ পেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। কারণ, আমরা বাইরে থেকে নিম্ন মানের বীজ এনে আবাদ করি, কিন্তু সেই বীজগুলো নষ্ট হয়।
‘বিএডিসির বীজের মান নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। তাদের বীজের ফলন অনেক ভালো। কিন্তু বিএডিসি অনেক পরে আলুর বীজ দেয়। ওই সময় আমাদের কোনো কাজে লাগে না।’
কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য জায়গা থেকে বীজ সংগ্রহ করে আলুর আবাদ করি। কিন্তু বাইরের বীজের মান খারাপ। বিএডিসিতে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে এখন বীজ দেয়ার সময় হয় নাই। তাই বাইরের খারাপ মানের বীজ দিয়ে আলুর আবাদ করতে হচ্ছে।’
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়। এর বিপরীতে ফলন হয়েছে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ১৭৫ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘দিনাজপুর জেলা আলুর জন্য বিখ্যাত। এ জেলার আলু বাইরেও সরবরাহ করা হয়। জেলায় যে পরিমাণ আলুর আবাদ করা হয়, তার মধ্যে ২৫ ভাগ আলু আগাম চাষ করা হয়। আগাম আলু চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হন।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) উপপরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘কৃষকদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আমরা আগাম আলু ছাড়ার বিষয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা দামের তালিকা পেয়েছি। বরাদ্দ সূচি হাতে পেলেই আলু ছেড়ে দেব।’