মেহেরপুরে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রতীক না দেয়ার দাবিতে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতবিনিময় করেছে জেলা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মিয়াজান আলী।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পাল্টা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বতর্মান এমপির পক্ষের লোকজন। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস।
দুটি কর্মসূচিতে উভয় পক্ষের নেতারা একে অপরের প্রতি বিষোদগার করে বক্তব্য দেন।
মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিয়াজান আলী বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন নেতাদের হাতে-পায়ে ধরে ভোটের মাঠে নামিয়েছিলেন। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা নৌকাকে জয়লাভ করিয়েছেন।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্বও দিয়েছেন। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার পর সে কথা মনে রাখেননি তিনি। বিজয়ের পর পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছেন। মূল্যায়ন করেননি কোনো নেতা-কর্মীকে।’
মিয়াজানের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের মানুষ নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় নৌকার বিপক্ষে ভোট করেছেন ফরহাদ হোসেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আরও বলেন, ‘এমনকি নৌকার প্রার্থীদের হারিয়ে তার (ফরহাদ) পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে এনে দিয়েছেন। তাই আগামীতে আমরা তাকে আর নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই না। তাকে বাদে জেলার যেকোনো নেতাকে নৌকার পক্ষে প্রার্থী করলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাঁধে কাঁধ রেখে মাঠে কাজ করব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস বলেন, ‘ফরহাদ হোসেন যদি নৌকার প্রার্থী হয় তাহলে নৌকায় ভোট দেব না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি। তাই সবাইকে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার আহ্বান জানাই।’
প্রতিপক্ষের নেতাদের অভিযোগ, ফরহাদ হোসেনের ভাই ও তার স্বজনরা দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের অত্যাচারে অনেকেই গৃহত্যাগী।
জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশানের সঞ্চলনায় আরও বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ারুল ইসলাম, আবদুল মান্নান, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক এম. এ. এস ইমন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেমস স্বপন মল্লিক, পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পাল্টা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস বলেন, ‘যারা বিরোধিতা করছেন তাদের মেরুদণ্ড শক্ত নয়। যখন যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়, তাদেরই বিপক্ষে থাকে এ গ্রুপটি। তারা জনবিচ্ছিন্ন নেতা।’
জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এমপি ফরহাদের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন মেহেরপুর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম শাহীন। ছবি:নিউজবাংলা
তিনি জানান, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের সব নেতা-কর্মী তাদের সঙ্গে আছেন। তাদের নিয়ে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম শাহীন বলেন, ‘যারা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন বা তার পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্কে যা রটানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। তারা এক প্রকার মিথ্যাচার করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মী এখানে এক ছায়াতলেই আছে।’
ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজ্জাদুল আনাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।