বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রায় এক যুগ ধরে শিকলবন্দি, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

  •    
  • ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:০৫

সাঘাটা উপজেলা ইউএনও ইছাহাক আলী বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। ওই নারীর বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করাসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।’

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় প্রায় ১২ বছর ধরে হাত-পায়ে লোহার শিকলে বন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন ২২ বছর বয়সী কাজিম। জন্মের ১০ বছর পরই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। দীর্ঘদিন শিকলে বাঁধা জীবন কাটালেও অভাবের সংসারে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি তার পরিবার।

মানুষকে মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, নারীদের আক্রমণ ও ঢিল ছোড়ার হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে কাজিমের হাত-পায়ে দেয়া হয় লোহার শিকল। নাতিকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সরকার, সমাজের বিত্তবান ও সরকারি-বেসরকারি দানশীল সংগঠনের কাছে আর্থিল সাহায্যের আবেদন জানান নানি আমিনা বেগম। এই নানির কাছেই থাকেন কাজিম।

জেলার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কচুয়া গ্রামের (হিন্দুপাড়া) গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাত-পায়ে শিকল পরা কাজিম বাড়ির পাশেই রাস্তায় গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। পাশেই প্লাস্টিকের বস্তা কেটে সেলাই করে তৈরি করে দেয়া হয়েছে শোয়ার স্থান। আছে মশারি, নেই শোয়ার চৌকি বা খাট। মাটিতেই বিছানা পাতানো রয়েছে। প্রতিবেদককে দেখেই এগিয়ে আসেন নানি আমিনা বেগম।

আমিনা বেগম বলেন, ‘কাজিম ছোটকাল থেকেই নানার বাড়িতেই মানুষ হয়েছে। ১০ বছর বয়সেই সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মানুষকে মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, নারীদের আক্রমণ ও ঢিল ছোড়ার হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে কাজিমের হাত-পায়ে দেয়া হয় লোহার শিকল। ঘরে নিয়ে গেলে আমাকেও মারধর করে। সেজন্য বাহিরেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে কাজিমের। তার নানা ছিলেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি ভিক্ষা করেই সংসার চালাতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। তিনিই একমাত্র সংসারে উপার্জনের অবলম্বন ছিলেন। কাজিম অসুস্থ হওয়ার পর পরই এলাকাবাসীর কাছে হাত পেতে যা পেয়েছি, তাই দিয়ে কাজিমকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু সুস্থ হয়নি। চিকিৎসকরা ঢাকায় চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওর বাবার বাড়ি গোবিন্দগঞ্জের পুনতাইর (ফকিরপাড়া গ্রামে)। আমার জামাতার সংসারও ভাল নয়। তাই ছোট থেকেই হামার (আমার) কাছে মানুষ হয়েছে। অসুখের শুরুতে মানুষের কাছে হাত পেতে যা টাকা পেয়েছি তা দিয়েই কাজিমকে সুস্থ করতে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে গেছিলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান কাজিম মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। তারা ভাল চিকিৎসা করতে বলেছিলেন কিন্ত অর্থের অভাবে তা করা হয় নাই।’

আমিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ভিক্ষা করে সংসার চালাত। তিনি কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ার পর হামার (আমার) অবস্থা খুব খারাপ। আমি এখন অন্যের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে কোনো রকমে তার মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিচ্ছি। অনেক সময় আমাদের খাবারই জোটে না, চিকিৎসার টাকা পাই কই!’

প্রতিবেশি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘১২ বছর থেকে রাস্তার ধারের গাছটির সঙ্গে লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন পার করছে কাজিম। দেখে আমাদেরও অনেক খারাপ লাগে। ডাক্তার বলেছে, চিকিৎসা করলে ছেলেটি ভালো হবে। সরকারিভাবে কিংবা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি যদি আর্থিকভাবে বড় ধরনের সাহায্য করে, তাতে ছেলেটি একটি নতুন জীবন ফিরে পাবে। বাঁচবে একটি পরিবার।’

আমেনা বেগম নামের অপর এক প্রতিবেশি বলেন, ‘ওর নানা ভিক্ষা করে সংসার চালাইছে। এখন নানি মানুষের বাড়িতে কাজ করে। চিকিৎসার টাকা কই পাবে? আমিনা বেগম বিধবা বা বয়স্ক ভাতা কোনোটাই পায় না। তার বিধবা বা বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করাসহ কাজিমের চিকিৎসায় আর্থিক সাহায্যের জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।’

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইছাহাক আলী বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। ওই নারীর বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করাসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর