গত বুধবার চোরাইপথে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের গহীন অরণ্যের খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী শিপার হাওলাদার। সেদিন থেকেই তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর আজ তার খণ্ডিত মাথা ও পরনের রক্তাক্ত প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘের মুখে পড়েছিলেন তিনি।
রোববার সকাল ৮টার দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা এলাকার গহীন অরণ্য থেকে শিপারের দেহাবশেষ ও পোশাক উদ্ধার করে গ্রামবাসী।
শিপার হাওলাদার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জেলে ফারুক হাওলাদারের ছেলে। তার এমন নৃশংস মৃত্যুতে সুন্দরবন ও আশপাশের গ্রামগুলোর বনজীবীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার আগেই তার (শিপার) বাড়ি ফিরে আসার কথা। কিন্তু রাতের মধ্যেও সে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। প্রথমে তারা নিজেরাই সুন্দরবনে তল্লাশি করেন। কিন্তু তার কোনো সন্ধান না পেয়ে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে রোববার ভোরে পরিবারের লোকজনসহ অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে সুন্দরবনে তল্লাশিতে যায়। তল্লাশির এক পর্যায়ে নিখোঁজের শুধু মাথা ও পরনের রক্তাক্ত প্যান্ট খুঁজে পায় গ্রামবাসী। তার দেহাবশেষের পাশে দেখা মেলে বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ।
তারা জানান, বাঘটি শিপারের পুরো দেহই খেয়ে ফেলেছে। ওই জেলের দেহাবশেষ নিয়ে বাড়ি ফিরলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরা। রোববার বিকেলে তার বাড়িতেই শিপারের দেহাবশেষ দাফন করা হয়েছে।
নিহত জেলে শিপার হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত
এ বিষয়ে সুন্দরবনের বন বিভাগ জানায়, কোনো বৈধ অনুমতিপত্র (পাশ-পারমিট) ছাড়াই চোরাইপথে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন জেলে শিপার। তার বনে প্রবেশের বিষয়টি বন বিভাগের জানা ছিল না। সুন্দরবনের বিপজ্জনক এলাকা দিয়ে মাছ শিকারের সময় তিনি বাঘের মুখে পড়ে থাকতে পারেন।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগরর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘গত বুধবার সকালে শিপার হাওলাদার একাই সুন্দরবনের তুলাতলা খালে ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরতে যান। সারা দিনেও সে ফিরে না আসলে উৎকণ্ঠায় পড়েন পরিবারের লোকজন। পরে বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে গ্রামবাসী সুন্দরবনে তল্লাশি চালিয়ে আজ সকাল ৮টার দিকে তুলাতলা এলাকার গহীন অরণ্য থেকে দেহাবশেষ উদ্ধার করে।’
সুন্দরবনের চাঁপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা এলাকার গহীন অরণ্য থেকে নিখোঁজের পাঁচদিন পর রোববার সকালে জেলে শিপার হাওলাদারের শুধু মাথা ও রক্তাক্ত পরনের প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
‘বাঘের আক্রমণে জেলে শিপারের মৃত্যু হয়েছে। শিপার কোনো পাস-পারমিট ছাড়াই অবৈধভাবে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর সুন্দরবন-সংলগ্ন লোকালয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বা কোনো জেলে যাতে অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ না করে, সেজন্য বন বিভাগ থেকে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’