দিনাজপুরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষোভে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারাল দা কিনে সেটি দিয়ে প্রকাশ্যে জয়া বর্মনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তরিকুল ইসলাম চালু।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম চালুর স্বীকারোক্তির বরাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল মাসুম। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জিন্নাহ আল মামুন ও কোতয়ালী থানার ওসি ফরিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘গত প্রায় ৬ মাস ধরে হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মন ও তরিকুল ইসলাম চালুর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক চলে আসছিল। ভালোবাসা চলাকালে তরিকুলের কাছ থেকে বহু টাকা ধার নিয়েছেন জয়া বর্মন। কিছুদিন আগে জয়া বর্মনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তরিকুল। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জয়া বর্মন। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষোভে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো দা কিনে সেটি দিয়ে জয়াকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন তরিকুল।’
শনিবার সকাল ৬টার দিকে জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে মাহিন সুইট হোটেলের ভেতর থেকে কোতয়ালী থানা পুলিশ আসামি তরিকুলকে গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করে পুলিশ। তরিকুল দিনাজপুর সদর উপজেলার মুরাদপুর নামপুকুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর পালক ছেলে।
জয়া ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বনডাঙ্গা গ্রামের সপাল রায়ের স্ত্রী। সপাল রায় দিনাজপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি ট্রাক্টর শো-রুমের নৈশ প্রহরী হিসেবে কাজ করেন। সপাল রায় ও জয়া বর্মন ফকিরপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জয়া বর্মন ও তরিকুল ইসলাম চালু বাস টার্মিনাল প্রাঙ্গণে সাউদিয়া হোটেলে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে কাজ করায় এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বামী সপাল রায় নৈশ প্রহরীর চাকরী করার সুযোগে জয়া তরিকুলকে নিয়ে প্রায় তার বাসায় আসতেন।
কিছুদিন আগে তিনিজয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এক সন্তানের জননী জয়া তার সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। দীর্ঘদিনের ভালোবাসার পর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় তরিকুলের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সেই ক্ষোভ থেকে প্রেমিকাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি। পরিকল্পনা মোতাবেক শহরের মহারাজার মোড়ের কামারের দোকান থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো দা কেনেন তরিকুল।
গত শুক্রবার দুপুরের পর হোটেল থেকে ছুটি নেন তরিকুল। প্রতিদিনের মতো হোটেলের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিলেন জয়া। মির্জাপুর বাস টার্মিনাল বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে পৌঁছালে তার ওপর হামলা করেন তরিকুল। ধারালো দায়ের কোপে গুরুতর আহত হন তিনি।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে নিহত জয়ার স্বামী সপাল রায় বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা করেন।