গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীসহ দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন বিপর্যন্ত। শরতকালে যেখানে হুটহাট বৃষ্টির কারণে পরিবেশে শীতলতা বজায় থাকার কথা, সে সময় এমন গরমে অস্বস্তি রয়েছেন সবাই। সারাদেশে কমবেশি বৃষ্টি ঝরলেও রাজধানীতে তার দেখা নেই একদমই।
শুক্রবার বিকেলের দিকে হালকা বৃষ্টির পর ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। ফলে গরমের মাত্রাও বাড়ে। তবে রাত বাড়তে বাড়তে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসে। টানা বৃষ্টি না হলে এই গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তবে গরম নিয়ে সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকায় দুদিন টানা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রাজধানীর তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।
লঘুচাপের প্রভাবে সাগর ও নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় নদীবন্দরগুলোয় ১ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোয় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, গতকাল বৃষ্টি হওয়ায় আজকে গতকালের তুলনায় তাপমাত্রা কমে এসেছে। সাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, ঢাকায় আগামী ৩ ও ৪ অক্টোবর বেশি বৃষ্টি হবে। এতে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে আসবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর ও পঞ্চগড় জেলাসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নিকলিতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঢাকায় ৩৫ দশমিক ৫ রাজশাহীতে ৩৬, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ৩৬ দশমিক ৪, সিলেটে ৩৬, চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৮, খুলনায় ৩০ দশমিক ৫ এবং বরিশালে ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে সাগরের বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, মধ্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে আজ রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।