বন্যপ্রাণীরা সাধারণত বনে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বনে এক প্রাণীর সঙ্গে আরেক প্রাণীর সখ্যতার দেখা মেলে হামেশা, কিন্তু মানুষের বেলায় ঠিক তার উল্টো। বনের কোনো প্রাণীই মানুষের কাছে ঘেষতে চায় না।
তবে এর ব্যতিক্রম একটি দৃশ্য দেখা গেছে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কুজাইল এলাকায়। সেখানে একটি পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে বন থেকে লোকালয়ে আসা এক হনুমানের।
গত তিন মাস ধরে ওই এলাকার লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি মুখপোড়া হনুমান। কেউ হনুমানটির ছবি তুলছেন, আবার কেউ সাধ্যমত খাবার দিচ্ছেন। কেউবা আবার তাকে দেখার জন্য ছুটে আসছেন আশপাশের এলাকা থেকে। হঠাৎ লোকালয়ে হনুমানকে দেখে স্থানীয়দের মাঝে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
শুরুর দিকে প্রাণীটিকে গাছের ডালে, ঘরের চালে, ভবনের ছাদে দেখা যেত। যাদের ঘরের চাল বা ভবনের ছাদে হনুমানটি বিচরণ করত, তারাও থাকতেন আতঙ্কে। অনেকেই আবার প্রাণীটিকে তাড়িয়ে দিত। কিন্তু ধীরে ধীরে হনুমানটির সঙ্গে স্থানীয়দের বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি হয়ে উঠেছে গ্রামের ছোট-বড় সবার আপন।
শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, হনুমানটি কুজাইল নমঃশূদ্র পাড়ায় ঘোরাফেরা করছে। ক্ষুধার তাড়নায় এক সময় প্রাণীটি ঢুকে পড়ে ওই গ্রামের নরেশ সরকারের বাড়িতে। এসময় বাড়িতে থাকা লোকজন হনুমানটিকে আদর করে আটা গুলিয়ে খাওয়ান।
শুধু নরেশ সরকার নয়, গ্রামের অনেক বাড়িতেই এভাবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে প্রাণীটি। কয়েকদিন আগে তৃষ্ণা পেলে গ্রামের বিকাশ প্রামানিকের বাড়িতে ঢুকে বারান্দায় বালতিতে রাখা পানি খাওয়া শুরু করে সে। পরে বাড়ির লোকজন হনুমানটির কাছে গিয়ে পানি ও খাবার দেন।
সুমন বসাক ও নীলমনি প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের গ্রামে সাধারণত হনুমান দেখা যায় না। মূলত খাবারের সন্ধানে এটি মানুষের কাছে ছুটে এসেছে। অবুঝ প্রাণীটি যেহেতু বাড়িতে চলে এসেছে তাই খাবার দিয়েছি। আমরা তার কোনো ক্ষতি চাই না। কেউ তাকে বিরক্তও করে না। কিছুদিন পর হয়তো আবার সে ফিরে যাবে তার আবাসস্থলে।’
বিকাশ প্রামানিক বলেন, ‘খাবারের সন্ধানে মুখকালো হনুমানটি ছুটছে মানুষের বাড়িতে, কখনও গাছের ডালে। হনুমানটি খাদ্যের অভাবে দলছুট হয়ে এই এলাকায় চলে এসেছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ তাকে দেখে খুব আনন্দ পাচ্ছে, খাবার দিচ্ছে। হনুমানটি যেন সবার আপনজন হয়ে উঠেছে।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বনভূমি কমে যাওয়া, খাবার সংকট কিংবা পাচারকারীর হাত থেকে পালিয়ে প্রাণীটি লোকালয়ে চলে আসতে পারে। এসময় খেয়াল রাখা দরকার, হনুমানটিকে যেন কেউ ক্ষতি না করে। বন বিভাগের উচিত হনুমানটিকে কোনো বনে ছেড়ে দিয়ে আসা।’
জেলা বন অফিসের সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদি জামান বলেন, ‘দলছুট হয়ে লোকালয়ে আসা হনুমানকে এলাকাবাসী যেন কোনো ক্ষতি বা বিরক্ত না করেন, সে বিষয়ে সবার সচেতনতা দরকার। যদি লোকালয়ে হনুমানের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হনুমান হয়তো আপনা থেকেই বনে ফিরে যাবে। প্রয়োজনে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।’