টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। তলিয়ে গেছে এক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের ক্ষেত।
এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে বাঁধে ফেলছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধভাঙা পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এই ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার।
উপজেলার পারনুরুল্লাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পুরনো বেড়িবাঁধটি সংস্কার না করায় প্রতিবছর বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে পরিবারের লোকজনসহ গরু-ছাগল নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। তাই আমরা বেড়িবাঁধটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
প্রসাদপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, ‘সোমবার রাত ২টার দিকে বাইবুল্যা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
বিষ্ণুপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান এস এম গোলাম আজম বলেন, ‘কয়লাবাড়ী বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া স্থানটি মেরামত না করায় সেখান দিয়ে পানি বিনা বাধায় গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০০ পরিবার। একইসঙ্গে তলিয়ে গেছে অন্তত ৩০০ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন এ বিষয়ে বলেন, ‘নদী-তীরবর্তী ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এলাকা ঘুরে ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। দু-একদিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পুরো তথ্য জানা যাবে।’
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ‘ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। প্লাবিত এলাকা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।’