বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অমলেন্দুর যে মানবিক কাজগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়

  • সালাহ্‌উদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার   
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৮:৪৯

ভারতের কারাগারে বন্দি তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দৌড়ঝাঁপ করে মুক্ত করে এনেছেন অমেলেন্দু কুমার দাশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্ত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এসব মানবিক কাজের সুবাদে এলাকায় তার পরিচিতি ‘মানবিক অমলেন্দু’ নামে।

আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। চারপাশে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ দেখার ফুরসত নেই! সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে চলাটাই হয়ে উঠেছে বাস্তবতা। তারপরও এই সমাজে কিছু মানুষ মানবতার সেবায় কাজ করে চলেছেন। তাদেরই একজন অমলেন্দু কুমার দাশ।

সিলেটের মৌলভীবাজারের বাসিন্দা অমলেন্দুর মানবিক কাজের ধরনটি অবশ্য আর দশজনের সঙ্গে মেলানো যাবে না। বিদেশের মাটিতে কারাবন্দি থাকা স্বজনকে মুক্ত করে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন শত শত পরিবারে। আর সে সুবাদে আজ তার পরিচিতি ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ও বলেন অনেকে।

ভারতের কারাগারে বন্দি তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে দৌড়ঝাঁপ করে মুক্ত করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অমেলেন্দু দাশ। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা ভারতের ১৯ নাগরিককে মুক্ত করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। আর এসব কাজ তিনি করেছেন স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে।

আইনি জটিলতা শেষে ভারতের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেশে নিয়ে আসা বাংলাদেশিদের পাশে অমলেন্দু কুমার। ছবি: নিউজবাংলা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে অমলেন্দু কুমার দাশের জন্ম। তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। চাকরিটা তার জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তবে এর বাইরে তার কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি বিশাল। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নানামুখী মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন। লোকসাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায়ও তিনি নিরলস কাজ করে চলেছেন।

অমলেন্দু কুমার জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি তিন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানবিক এসব কাজের পেছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দির করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি।

ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। আদালত এক মাসের কারাদণ্ড দিলে তাদেরকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় মা ও ছেলে কারামুক্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে অমলেন্দু দাশ প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পান।

অবশেষে ১৬ মাসের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা ও ছেলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হন। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময়টাতে তাদের সেই আনন্দের বাঁধভাঙা কান্না হৃদয় ছুয়ে যায় অমলেন্দুর। আর মা-ছেলের ঘরে ফেরার সেই আনন্দ তাকে এমন মানবিক কাজে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করে।

ভারতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর স্বজনকে জড়িয়ে এক যুবকের আনন্দের কান্না। ছবি: নিউজবাংলা

অমলেন্দু পরবর্তী সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি দেখতে পান, এখানে আটক ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেরই কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যথোপযুক্ত উদ্যোগে অভাবে তারা এখানে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

নানা স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে প্রশাসনিক ঝামেলা মিটিয়ে তিনি এসব ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এই বন্দিদের অনেকেই ১৪ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

এবার ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশিদের মুক্ত করে আনার পালা। তবে শুরুতে এসব বিষয় অমলেন্দুর দাশের অনেকটা অজানাই ছিল।

ভারতীয় নাগরিকদের কারামুক্ত করে নিজ দেশে পাঠাতে অমলেন্দু দাশের এই মহতী কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতেও সেসব খবর ব্যাপক প্রচার পায়। সেখানকার কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

এমন খবর পাওয়ার পরপরই মানবিক বোধ থেকে তৎপর হয়ে ওঠেন অমলেন্দু। উভয় দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের তিন শতাধিক নাগরিককে কারামুক্ত করে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে ফিরিয়ে দেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটানো স্বজনদের কাছে।

মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা অমলেন্দু কুমার দাশ বলেন, ‘মানবিক তাগাদা থেকে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমি এসব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। নিজের চাকরির বেতনের টাকার একটা অংশ খরচ করে আমি কাজগুলো করে চলেছি।

ভারতের কারাগার থেকে মুক্তির পর দেশে ফেরার পথে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশি নাগরিকরা। ছবি: নিউজবাংলা

‘বিপদাপন্ন মানুষগুলোর কান্না এবং বিপদমুক্তির পর তাদের মধ্যে যে আনন্দ ও স্বস্তি আমি দেখতে পাই সেটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। আর তা আমাকে এসব সব কাজে প্রেরণা যোগায়।’

অসহায় বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুবাদে অমলেন্দু দাশ সাধারণ মানুষের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মহামানব’।

প্রসঙ্গত, এযাবৎকালের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত টিভি অনুষ্ঠানগুলোর একটি ‘ইত্যাদি’তে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে রয়েছে অমলেন্দুর মহৎ কাজগুলো। এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নেত্রকোণায়, যা প্রচার হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।

এ বিভাগের আরো খবর