চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বৃহস্পতিবার লাগেজ থেকে উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত লাশের পরিচয় মিলেছে।
লাশটি জেলার বাঁশখালী উপজেলার ৬২ বছর বয়সী মোহাম্মদ হাসানের। হত্যার রহস্যও উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় স্ত্রী ও সন্তানরা হাসানকে খুন করে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পিবিআই।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।
হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে খুনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে লাশের আরও কিছু অংশ পাওয়া গেলেও মাথা এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই।
নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের কাছাকাছি ১২ নম্বর গেটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি ট্রলিব্যাগে হাসানের মস্তকবিহীন খণ্ড-বিখণ্ড লাশ পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের দুটি হাত, দুটি পা, কনুই থেকে কাঁধ ও হাঁটু থেকে ঊরুর অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির বাদী হয়ে এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডটির ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। সংস্থাটি আঙুলের ছাপ নিয়ে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। পরে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা ও ছেলে মোস্তাফিজুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি প্রায় ২৭ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত নিখোঁজ অবস্থায় ছিলেন। সম্প্রতি পরিবারের কাছে ফিরে আসার পর সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য তাকে চাপ দেয়া শুরু করে তার পরিবার। তাতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তানেরা ঠান্ডা মাথায় তাকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন, যাতে হত্যাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ গোপন থাকে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকায় হাসানকে খুন করা হয়। ওই বাসায় হাসানের ছোট ছেলে তার স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন। ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহর পর পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হত্যার পর শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করার বিষয়টি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। আর এটা বের করছিলেন হাসানের ছোট ছেলে।
‘তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসায় হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে ছিলেন। হাসানের অবস্থানও রাতে সেখানে ছিল।’
পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, ‘আটক স্ত্রী ও সন্তান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা জানান, হাসান দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোথায় ছিলেন, সেটা তার স্ত্রী-সন্তানরা জানতেন না। এ কারণে তারা হাসানকে মৃত দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেন। সম্প্রতি তিনি ফিরে আসেন। এতে তারা বিপাকে পড়ে যান। এ জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
‘স্ত্রী, দুই ছেলে ও ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়। ঠান্ডা মাথায় লাশ কেটে টুকরো করে ট্রলিব্যাগে আট টুকরো রাখা হয়। মাথা এবং বুকসহ শরীরের আরও কিছু অংশ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
এসপি নাইমা বলেন, ‘ছোট ছেলেই তার বাবার শরীরের টুকরোগুলো বিভিন্ন স্থানে ফেলেন।’