সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সারদাস্মৃতি ভবনে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বাদী হয়ে এ মামলা করেন, তবে মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আমরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। এই সময়ে একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। প্রকাশ্যে হামলার পরও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারা দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা রোববার নগরে মৌন মিছিল করব। এই সময়ে হামলাকারীরা গেপ্তার না হলে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব আমরা।’
মামলা করার তথ্য নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তা খুঁজে বের করছে। এ জন্য পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিএনপির রোড মার্চ ও সমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েক জন নেতা-কর্মী নগরের কিনব্রিজ সংলগ্ন সারদা হলে উপস্থিত সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। হামলায় অন্তত ১০ সংস্কৃতিকর্মী আহত হন বলে সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন লিটল থিয়েটারের আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম মুকুল, নাট্যকর্মী হুমায়ুন কবির জুয়েল, নাহিদ পারভেজ বাবু, চয়ন পাল শান্ত, নাট্য সংগঠক বিভাস শ্যাম যাদন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্তের ছেলে লামানুজ গুপ্ত।
হামলার প্রতিবাদে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাট্যকর্মীরা নগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ওই সময় তারা দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সিলেটের ৮৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী সারদা হল প্রায় ১১ বছর ধরে অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সংস্কারের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা ছিল। এ উপলক্ষে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সেখানে নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। এ জন্য সংস্কৃতিকর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সেখানে মহড়া দেন।
সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিএনপির একটি দলের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। এ সময় তারা নারী সংস্কৃতিকর্মীসহ উপস্থিত নাট্যকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে বাধা দিলে কয়েকজন নেতা-কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা চালান। পরে সংস্কৃতিকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
হামলার খবর পেয়ে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
আরিফুল দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
হামলায় বিএনপি জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কে বা কারা হামলা চালিয়েছে জানি না, তবে বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’