মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে হাজী রোডের বি ব্লকে মুক্তা ফার্মেসির সামনে বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে নিহত মিজান-মুক্তা দম্পতির সাত মাস বয়সী হোসাইন নামের শিশু সন্তান।
চিকিৎসা শেষে শিশু হোসাইনকে বস্তিতে নিয়ে আসা হয়েছে। বস্তিবাসীই তার দেখাশোনা করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বস্তির ভেতরে একটি আধাপাকা টিনশেড বাসার দোতলায় গিয়ে দেখা মেলে শিশু হোসাইনের। এক নারীর কোলে নিয়ে চামচে করে পানি খাওয়াচ্ছেন তাকে। কারণ ডাক্তার তাকে প্রচুর পানি খাওয়াতে বলেছেন।
পানি খাওয়ানোর সময় মাঝে মাঝেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছিল হোসাইন। মনে হচ্ছিল যেন সে তার মায়ের কোল চাচ্ছে। কিন্তু তার মা, বাবা ও বোন তখন মর্গের ফ্রিজে।
হোসাইনকে ঘিরে রয়েছে অনেকেই। সবাই তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। তার কান্না শুনতে শুনতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।
বস্তিবাসীরা জানান, অমন দুর্যোগের রাতে তাকে (হোসাইন) বাঁচাতে অনেক ঝড়ঝাপটা পার করতে হয়েছে তাদের।
হোসাইন তার মায়ের কোলে ছিল। তার মা মুক্তা যখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন, তখন তার কোল থেকে ছিটকে পানিতে খানিকটা দূরে গিয়ে পড়ে হোসাইন। পরে তাকে পানি থেকে একজন তুলে এনে এক নারীর হাতে দেন। ওই নারীর কাছ থেকে হোসাইনকে ঘরে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন বস্তির বাসিন্দা আমেনা বেগম।
ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে নিউজবাংলাকে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি (হোসেনকে) বাসায় নিয়ে ভিজা জামাকাপড় খুলে, তেল-পানি দিয়ে, কম্বল পেচিয়ে হাসপালে নিয়ে গেছি। প্রথমে মিরপুর ২ নম্বর শিশু হাসপালে নিলে সেখান থেকে ফেরত পাঠায়। পরে আরও তিন হাসপালে যাই। সব হাসপাতালগুলোতে একই কথা বলে- এটা পুলিশ কেস, আমরা ধরব না। সবখান থেকেই আমাদের ফেরত পাঠায়।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কেস বলে কেউ চিকিৎসা দেয় নাই। পরে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে চিকিৎসা দিছি। বৃষ্টিতে সারা রাস্তায় জ্যাম ছিল। কীভাবে যে বাচ্চাটাকে নিয়ে মেডিক্যাল থেকে মেডিক্যাল ঘুরছি, আল্লাহ ভালো জানেন।’
যারা একটা বাচ্চাকে এই অবস্থায়ও চিকিৎসা দিতে পারে না, তারা কেন মেডিক্যাল খুলেছে- প্রশ্ন আমেনা বেগমের।
প্রসঙ্গত, রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়।