‘আজ ৫১ বছর পর আবার স্কুলে এসেছি। আমাদের অনেক শিক্ষক, অনেক বান্ধবী আজ বেঁচে নেই। তাদের কথা খুব মনে পড়ছে।’
কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ও এসএসসি ৭১ ব্যাচের শিরিন হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে পড়ি, তখন যুদ্ধ চলছিল। স্কুল থেকে আমরা দেশের জন্য স্বাধীনতার স্লোগান দিতাম। ওইবার আমাদের পরীক্ষা হয়নি। পরের বছর আমরা পরীক্ষা দিয়েছি।’
কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার স্কুলটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন স্কুল প্রাঙ্গণে। সেখানে সবাই তাদের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকতা আফজালুন নেছা বলেন, ‘৩৬ বছর পর বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমি গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দেখতে স্কুল মাঠে ছিলাম। আমরা ৮৯ ব্যাচের ছয়জন বান্ধবী আজ (শুক্রবার) দেখা করেছি; একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছি।’
খিলগাঁও মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যক্ষ ইয়াকুতেন্নেছা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘৫৭ বছর আগের কথা। আব্বা আমাকে হাতে ধরে স্কুলে এনেছিলেন।
‘সেদিনের কথা মনে পড়ছে। কী যে আনন্দ লাগছে! আমি এ স্কুলের এসএসসি ৬৬ ব্যাচ।’
ইয়াকুতেন্নেছার পাশে থাকা তার বান্ধবী রওশন আক্তার বেগম আনন্দ নিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে আজ ঈদ মনে হচ্ছে। আমি এ আয়োজনে যোগ দিতে কত বছর ধরে যে অপেক্ষা করছিলাম।’
ওই সময় ৯১ ব্যাচের ছাত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবাইদা নূর খান বলেন, ‘সপ্তাহের সব দিন আমাদের কাছে আনন্দের ছিল। স্কুলের ম্যাম যারা ছিলেন, তারা সবাই কড়া শাসনে রাখতেন। তাদের এমন শাসনের কারণে আজ আমিও শিক্ষক হয়েছি; সম্মানিত হয়েছি।’
দেড় শ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল ৯টায় কুমিল্লা টাউন হল থেকে আনন্দ র্যালি বের হয়। র্যালি উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দীন বাহার।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে তিনি বলেন, ‘নবাব ফয়জুন্নেছা উপমহাদেশের গর্ব। আমি তার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করাসহ তার বাড়িটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য জাতীয় সংসদে কথা বলেছি।
‘আমাদের সৌভাগ্য নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা আমাদের কুমিল্লার মেয়ে। তিনি কুমিল্লাকে সমৃদ্ধ করেছেন।’