রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে অস্ত্রোপচার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট (বিএসএ) ও প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার নেতারা বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মেডিক্যালে কলেজে বৈঠকে বসেন।
সেখানে উপস্থিত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএ রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ডা. নওশাদ আলী জানান, উভয় পক্ষ আলোচনা শেষে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যা থেকেই সবগুলো ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের ফি বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দিয়েছে ক্লিনিক মালিকরা।
প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার নেতারা বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বন্ধের ঘোষণা দেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট (বিএসএ) রাজশাহী শাখা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পারিশ্রমিকের নতুন তালিকা পাঠালে দুই পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
কোনো সমাধানে না পৌঁছাতে পারায় বৃহস্পতিবার থেকে অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল-মালিকরা। ক্লিনিকগুলোতে অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকলেও ওটি ধর্মঘট চলছে।
রাজশাহী নগরীর সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওটি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়। ওই সময় নগরীর বেশ কিছু ক্লিনিকে যোগাযোগ করলে সব জায়গা থেকেই জানানো হয় অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে।
রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে সকালে ফোন দিয়ে অপারেশন হবে কি না জানতে চাইলে রিসিপসন থেকে জানানো হয়, সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে।
কখন চালু হতে পারে জানতে চাইলে ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে কী ঝামেলা হয়েছে। এ কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে। নতুন সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। নগরীর সেবা ক্লিনিকে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকেও জানানো হয় অস্ত্রোপচার বন্ধের কথা।
রাজশাহী মহানগরীর রেস্তোরাঁয় বুধবার সন্ধ্যার পর সংবাদ সম্মেলন করেন ক্লিনিক মালিকরা। সংবাদ সম্মলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার নেতারা জানান, অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা যে নতুন ফি নির্ধারণ করেছেন, তা বর্তমান ফির দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা যে রেট নির্ধারণ করেছেন, তা বাস্তবায়ন করলে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে অনেক মানুষের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসা খরচ সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।
‘তাদের এ দাবির প্রতিবাদে আমরা রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত আমরা রোগীদের স্বার্থেই নিয়েছি।’
বিএসএর রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. খিজির হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সালের পর আমাদের ফি আর বৃদ্ধি করা হয়নি। ক্লিনিক ও হাসপাতাল-মালিকপক্ষ অপারেশনের সময় অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের নামে রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে। আমরা তাদের বলেছি, আমাদের নামে নেয়া টাকা আমাদেরই দিতে হবে।’
নতুন ফি বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রসূতিদের সিজার করতে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা পান দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আমরা সেই ফি আড়াই হাজার করার দাবি জানিয়েছি। অথচ ক্লিনিক-মালিকরা বলছেন, আমরা নাকি দ্বিগুণ ফি বৃদ্ধির দাবি করছি।’