বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। আর এই দাবিতে জনগণের আন্দোলনে এই সরকারের পতন হবে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত বিএনপির রোডমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মানুষ আর একদিনও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তার প্রমাণ আজ জনগণ দিয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোডমার্চে মানুষের ঢল নেমেছে।
‘সারা বিশ্ব আজ এদেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে। তারা চায় এদেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। এজন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। এই নির্বাচন কমিশনকে সরে যেতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ভারত এসে আপনাদের ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। ক্ষমতায় যেতে হলে জগেণের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ভাষা বুঝতে হবে। দেশের মালিক জনগণ, ভারত না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রোডমার্চের পরও সরকার পদত্যাগ না করলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো। ধাপে ধাপে আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, যা শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন না। এখন শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে, আর তা হচ্ছে হরতাল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারিনি, লাশের ওপর নৃত্য করিনি। আমরা ৭১ সালে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সাম্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। এখন গণতন্ত্রের জন্য, বাক-স্বাধীনতার জন্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
‘সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। তারা সাংবাদিক সাগর ও রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার করেনি। আওয়ামী লীগ লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে রোডমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার। প্রতিদিন গুম-খুন হচ্ছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।
‘মুক্তিযুদ্ধের পর এটা সবচেয়ে বড় মুক্তির সংগ্রাম। বুকের রক্ত দিয়ে এই সংগ্রামে জয়ী হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, রোডমার্চের দলনেতা হাবীব উন নবী সোহেল, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সিলেটে তুমুল বৃষ্টি হয়। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোডমার্চ সিলেটে এসে পৌঁছে। সমাবেশ চলার সময়েও বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন নেতাকর্মীরা।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত এই রোডমার্চ করে বিএনপি। বৃহস্পতিবার সকালে ভৈরবের দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে রোডমার্চটি শুরু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুর হয়ে সন্ধ্যায় সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এসে রোডমার্চ শেষ হয়।